Sunday, December 20, 2015

সাহিত্য অঞ্জলি বিজয় দিবস (৪র্থ) সংখ্যা






বিজয় দিবস-২০১৫ 
(Victory Day issue-2015)

সাহিত্য অঞ্জলি বিজয় দিবস সংখ্যা 
(Special issue of Victory Day, Bangladesh remembering 16 December of 1971)


সাহিত্য অঞ্জলি বিজয় দিবস (৪র্থ) সংখ্যার লেখক/কবি (Contents)
………………………........................................................................

ইমরোজ বিন মশিউর                        কবিতাগুচ্ছ 
ফারজানা ফাইজা                               কবিতাগুচ্ছ 
মোহাম্মদ আন্ওয়ারুল কবীর                   কবিতা 
জাহান আয়েশা নুসরাত                       আর্ট ফিল্ম 
কবিতা রহমান                               কবিতা 
সাবরিনা সিরাজী                             কবিতা 
তাহমিনা শাম্মী                               কবিতাগুচ্ছ
এমদাদুল হক তুহিন                             কবিতা 
Alice Kinsella                                  Foreign Poet
ফড়িং ক্যামেলিয়া                             কবিতা ও গদ্য 
সেটেলার                                         ইমতিয়াজ মাহমুদ
সুবর্ণা দাশ মুন                                           ধারাবাহিক গল্প


.....……………………………………………………………..
প্রামাণ্যচিত্র                                             বাংলাদেশ: ভিডিওচিত্রে জন্মযুদ্ধ
………………………………………………………………….  













ইমরোজ বিন মশিউর
(Imroze Bin Mashiur)

আগে কথা ফুরোতো না, ফোনে পয়সা ফুরিয়ে যেতো;
এখন কথা ফুরিয়ে যায়...ফোনে থাকে অফুরন্ত ব্যালেন্স।
#
স্বপ্ন সা‌জিয়ে রেখো, উঠোন জুড়ে... সময় পেলে, স্বপ্ন কিনতে যাবো!
#
তু‌মি ধোঁয়া ওঠা ক‌ফির মতো...
সকালে তৃ‌প্তিকর, দুপুরে বির‌ক্তিকর আর রা‌তে- না খাওয়াই ভা‌লো!
#
ভুলে যেও আমায় তু‌মি, ভুলে যেও। 
যেমন রোদ মাতাল আকাশ মনে রাখে না বৃ‌ষ্টি বিবাগী দিন;
তেমনই আমায় ভুলে যেও তু‌মি।
যেমন সদ্য আলোকিত ঘর ভুলে যায় গৃহব‌ন্দি আঁধারের সিম্ফনি
তেমনই, আমাকেও ভুলে যেও তু‌মি, মনে রেখো না।
#
জানো পারমিতা...! তুমি বোধহয় জানো না;
শুধু তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে পার করে দেওয়া যায় পুরো একটা বুনো প্রজাপতি জীবন! 
#
তোমাকে পাওয়াটা ভীষণ জরু‌রি বিষয়টা কিন্তু এমন নয়,
আবার তোমাকে না পেলেও নয়, বিষয়টা এমনও না।
বিষয়‌টি আরেকটু জ‌টিল...!
তোমাকে পাওয়াটা আমার জন্য অ‌নিবার্য এবং প্রশ্নাতীত!
#
সারাজীবন শুধু দিয়েই গেলে, কোনো‌দিন প্র‌তিদান চাই‌লে না।
মানুষ কীভাবে এতটা নিঃস্বার্থ হয়, বু‌ঝি না! 
তাই, শুধু স্বার্থপর মানুষ খুঁ‌জি, স্বার্থহীন খুঁ‌জি না।
#
জেগে দে‌খি... ছ‌ড়িয়ে ছি‌টি‌য়ে আছে স্মৃ‌তিভস্মৃ!
পড়ে আছে পায়ে মাড়ানো ফুল, কুয়াশার বেষ্টনী, ঘনছায়া, লালরঙ মা‌টি, সিঁদুরের কৌটো, নিভে যাওয়া প্রদীপ

আর, উষ্ণ রাতের গা বেয়ে উঠে আসে একটা শীর্ণ স্বর্ণলতা...


ফারজানা ফাইজা
(Farjana Faija)

আমার একটা তুমি আছে 
জানলো নাতো কেউ
#
এই অবেলার অবসরে লাগছে 
ভীষণ একা
কতো দিন হয়নিতো তোমার হাতটি ছুঁয়ে দেখা
#
কিছু ভুল ভয়ংকর রকম সুন্দর 
কিশোরীর প্রথম প্রেমের মতো
#
মানুষগুলো বেঁচে থাকুক 
পরিপূর্ণ মানুষ রূপে
#
...এখন হৃদয় শূন্য 
যেমন মধ্যরাতের রাজপথ
#
কফির দোকান আর মদের দোকানের গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হলো প্রেমের শুরু আর শেষ
#
কারও গল্পের মলাট হতে চাইনি
কখনো 
চেয়েছি সেই গল্পটাই আমার হোক
#
বিকেলে গুলো প্রেমিকের মতো 
আসে ভালো লাগা দেয়
আবার চলে যায়
#
পৃথিবীর একটা মানুষের কাছে 
আপনি স্বেচ্ছায় অসহায় 
যাকে আপনি খুব বেশি ভালোবাসেন॥
………………………..


মোহাম্মদ আন্ওয়ারুল কবীর

সাপের মন্ত্রে নেশা ধরে
বানের নদীর কুলু-কুলু বয়ে আনে অজানা ভয়
বিশ্বাস-মাদুলিতে ভেসে আসে অলীক পুরুষ

নেশা টুঁটে যায় বীক্ষণে ফেলে আলো
অলিতেগলিতে বাজে শুধু রূপকথার কাহন

মাদুলি ছিঁড়ে গেলেই হারিয়ে যায় অলীক পুরুষ।
...........................................



জাহান আয়েশা নুসরাত
(Jahan Ayesha Nusrat)


জাহান আয়েশা নুসরাত বিভিন্ন দেশের আর্টফিল্ম দেখে তার বর্ণনা দিয়েছেন। দিয়েছেন সে ছবির ব্যাখ্যাও। তুলে ধরেছেন শিল্পসম্মত ছায়াছবি কীভাবে নির্মাণ করা প্রয়োজন। তিনি ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন, ছায়াছবিও জীবনের কথা বলে এবং সে জীবন কাহিনী শিল্পসম্মতভাবে সমাজের সবার কাছেই সমানভাবেই তুলে ধরা যায়। সেই সঙ্গে ছবির ঘটনা, অভিনয় এবং কাহিনী সমাজ জীবনকে কীভাবে আলোড়িত করে। কীভাবে সমাজ বদলের হাতিয়ার হতে পারে ছায়াছবিও।

Miracle in Cell No. 7 

……………………….
এক শিশু মেয়েকে খুনের দায়ে বাবার ফাঁসি হয়ে যায়। সেই বাবার সাথে জেলের ভেতর কাটানো কিছুদিনের স্মৃতি নিয়ে বড় হয়ে ওঠে মেয়েটি। বড় হয়ে ওকালতি পেশাকে বেছে নেয়। উদ্দেশ্য তার বাবা নিরপরাধ ছিল, সেটা সবার সামনে প্রমাণ করা।

All About My Wife 

...................................
বিয়ের ৭ বছর পার হওয়ার পর স্বামী তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ স্ত্রী বাচাল এবং স্ত্রীর কারণে তার নিজের কোনো প্রাইভেসি নেই। কিন্তু ডিভোর্সের কথাটাও সেই স্ত্রীকে বলতে পারে না এই ভেবে যে, সেটা বলা মাত্রই বাচালতা আরো বেড়ে যাবে।

এরপর চাকরিতে বদলি নিয়ে অন্য জায়গায় চলে যায় সে। ভাবে, স্ত্রীর কাছ থেকে মুক্তি পাওয়া গেল। কিন্তু সেখানেও পৌঁছে যায় তার বউ। একসময় পাশের বাড়ির ক্যাসানোভা প্রতিবেশীকে অনুরোধ জানায়, তার বউকে মুগ্ধ করতে, যেন বউ নিজেই তাকে ছেড়ে চলে যায়। এক সময় ক্যাসানোভা আর তার বউ সত্যি সত্যিই একে অন্যের প্রতি মুগ্ধ হয়ে যায়...!

Crossing

…………………….
অভাবে-অনাহারে পড়ে উত্তর কোরিয়া ছেড়ে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চীনে চলে যায় কিম ইয়ং সো। উত্তর কোরিয়াতে রেখে যায় গর্ভবতী স্ত্রী আর ছোট ছেলেকে। চীনে যেখানে সে কাজ নিয়েছিল, সেখানে পুলিশের কাছে ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে গিয়ে শরণার্থী হিসেবে আবার দক্ষিণ কোরিয়াতে পাড়ি জমায়। এর মধ্যে পরিবারের কারো সাথেই তার যোগাযোগ হয় না। সে জানতেও পারে না যে, অসুস্থ হয়ে তার স্ত্রী মারা গেছে! ছোট ছেলেটাও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাবার কাছে চীনে যাওয়ার চেষ্টা করলে উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের হাতে ধরা পড়ে। বাবা-ছেলের চেষ্টা চলতেই থাকে একত্র হওয়ার। অবশেষে একসময় বাবা-ছেলের দেখা হয়।

Blind
…………………….
অ্যাক্সিডেন্টে ছোটভাই আর নিজের দৃষ্টিশক্তি হারানো এক নারী পুলিশ অফিসারের পিছু নেয় এক সিরিয়াল কিলার। কারণ অন্ধ হয়েও এই নারী সিরিয়াল কিলার অনেক কিছুই জানে, যা পুলিশ এখনো আঁচও করতে পারেনি।


শেষ পর্যন্ত না দেখলে কিছুই আন্দাজ করা যাবে না। তাই, সময় করে দেখে নেবেন এই অসাধারণ  মুভিগুলো।
..........................................


কবিতা রহমান
শরতের জন্মদিন

বেলার আঁচলে মেখে থাকা শরৎ সৌরভের
যৌবনে ফিরে আসে কাশবনের সফেদ হাসিতে
অপেক্ষার প্রহরে জমানো সন্ধ্যে তারারা ঝিলিমিলি
ছড়িয়ে পড়ে মেঘে ঢাকা আকাশের ফাঁকে
মায়াচ্ছন্ন পৃথিবী
জননীর গর্ভের লালিত শিশুরু ভালোবাসায় কাতর
সহ্য করে অসহ্য ব্যথা
শরতের কোলে ফিরে আসা কাশফুলের গন্ধে
ছুঁয়ে নেয়া অনুরাগের পশলা বৃষ্টির টানে
এখনো মেঘের ঘরে ক্যান্ডেলে অগ্নি জ্বলে
শরত সৌরভে মাখা; বালিকার জন্মদিনে
……………………………


সাবরিনা সিরাজী তিতির

অদ্ভুত আঁধার ধেয়ে আসছে নীরবে
প্রতিরাতের চেনা আঁধারের সাথে তাকে কিছুতেই মেলানো গেল না
কোথাও আজ একটা জোনাকও নেই

তারা যেন জেনে গেছে এ আঁধার কখনো আলোর মুখ দেখবে না
তুমি দাঁড়িয়ে আছো ভোরের কাছেই
কোনোরকমে তোমাকে ছুঁয়ে দিতে পারলেই পাখি পাবে আলোর ভোর
বেঁচে উঠবে নতুন আলোয়

আঁধার গহীনে টেনে নেবার আগেই পাখিকে ভোর আনতে হবে
ডানাহীন পাখি প্রাণপণে ছুটছে, ছুটছে
আঁধারপথ ক্রমান্বয়ে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হচ্ছে
পথ ফুরোয় না আর

পাখির ক্লান্ত শরীর তোমায় ছোঁবার আগেই হয়ত থেমে যাবে আঁধারে
আলো নিয়ে তোমার অপেক্ষা আর ফুরোবে না
তোমার পাখি আর তোমার হবে না
তারপর অনেক অনেক বছর পার হয়ে যাবে
ভালোবাসার গল্পে ঠাঁই হবে আঁধারপাখির
সবাই বলবে, কোনো এক পাখি আলো ভালোবেসেছিল

তারা জানবে না ডানাহীন পাখির জন্য আলো নয়
তার জন্য নিকষ আঁধার...!


তাহমিনা শাম্মী
অলঙ্ঘ অপার
..............

চারিদিকে ধূ ধূ মানব জীবন
তপ্ত গন্ধ জালে রক্ত চন্দন

বুকে বাজে সঙ্গীত বিরহবিধুর
বেদনার কারাগারে বিষাদের সুর
আকাশে নীল নেই কালো ধোঁয়া
আহ্! হৃদয়ে জ্বলন্ত চিতা
উলঙ্গ খঞ্জর উগ্র ক্ষুধা
শুষ্ক নদীর কাছে পিপাসা


বক্ষে ঊর্মি দোলে নষ্টনীড়
কানের পাশে ডাকে ক্ষুধার্ত চিল
বিদ্রোহে জেগে ওঠে নিয়তাত্মা
অতৃপ্ত পিপাসা ক্ষুরধার বাসনা
উহ্! প্রাণেতে অনন্ত জ্বালা।

#
কলকল ছলছল মোহনার জল
ঝমঝম ঝিঁঝিঁ অভ্র অনীলে মাখামাখি
ঘুমে ঢুলুঢুলু ফুল্লরা কালকেতুর বুকে
রাগে গরগর চণ্ডীর বুক জ্বলে।

নর্মসখা
আমার কবিতারা প্রতিরাতেই খেঁই হারায়
তোমার বুকের কাছে, শিথানে, আঙুলের ডগায়
আমার কবিতারা কথা কয়, আর কথা কয়
তোমার চোখের তারায়, পাঁজরের হাড়ে
আমার স্বপ্নেরা পাখামেলা বুনোহাঁস
শুধু ওড়ে ওড়ে আর ওড়ে...
উষ্ণ অভিলাষী মন তোমার হৃদয় জুড়ে লাঙলের ফলায় চাষ করে অনাবাদী ভূমি। 
#
গল্পের শেষে হয়েছিল যে যাত্রার শুরু
বহু আগে... তারও ইতি হয়ে গেছে
অসংখ্য ভুল লতায় জড়ানো জীবন
দগ্ধ হৃদয় শুধু জ্বলে। 
#
বয়স বেশি বলিয়া বুড়া নহ হে গুণী
চিন্তায় চেতনে, চলনে ও বলনে
তুমি শতাব্দীর প্রাচীন প্রাণী।
#
কত কথা বাজে কানে কানে
বাসা বাঁধে প্রাণে অনুভবে
মন চায় সব কথা বলে দেই তারে...
……………………

এমদাদুল হক তুহিন

নিকষ অন্ধকারের ওই সব রাতে কেবল তুমিই চাঁদ ছিলে না, ছিল অতন্দ্রিলাও। ভোরের আলোয় শিশির দেখবে বলে জাগিয়ে রাখতো আমায়। আর তুমি, স্বপ্ন দেখিয়েছিলে- কথা হবে একদিন, তারার ফ্রেমে, ভরা পূর্ণিমায়।

আজও হয়ত চাঁদ ওঠে, খেলা করে তারা। তবে তারার ফ্রেমে খেলা হয়নি আমাদের! অতন্দ্রিলারাও আগ্রহ ফুরিয়েছে বহুকাল। ফাল্গুনী জানি না- তোকে ভালোবাসার পর কী হয়েছে আমার! কেন আমার এমন হয়! কেন ভালোবাসতে পারি না দ্বিতীয়াকে! ফুল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ললনাও হয় কেন উপেক্ষিত! জানি- উত্তর নেই। তবে জানি কেবল, তোর হৃদয়ে নেই কোনো মায়া, অনুকম্পা! তবে ফাল্গুনী, আমার মৃত্যুর পর...!
#
কত কিছু বলার ছিল, অথচ হয়নি বলা কিছুই। হয় নি বলা; এখনও কাটে অপেক্ষায়।
#
তোমার ফোন নম্বর পেতে পেতে আমি ঘুমিয়ে গেলে বলবে কে কথা তোমার সনে!
#
এই শীতের রাতে
চাদর হবে চাদর!
ভালোবেসে একটু পরশ

নেবে কি আদর...!
............................................................................................

বিদেশি তরুণ কবির কবিতা
(Foreign Young Poet)
Alice Kinsella 
যুক্তরাজ্যের ডাবলিনের একজন তরুণ কবি। তিনি কবিতা ছাড়াও গদ্যলেখক। তার বিভিন্ন কবিতা ও লেখা যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে Headspace magazine  The Sunday Independent অন্যতম Alice Kinsella বর্তমানে সেখানকার ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিনে ইংরেজি সাহিত্যের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বর্তমানে উপন্যাস লিখতে শুরু করেছেন।




(Alice Kinsella is a young writer living in Dublin. She writes both poetry and fiction and has been published in a variety of publications, including Headspace magazine and The Sunday Independent.
She is in her final year of English Literature at Trinity College Dublin and currently working on her first novel. written by Christine Elizabeth Murray)

Sea walk

A grey dayBitter winter
Biting wind
And there was us

We got our shoes
Wet and our toes
Wrinkled
In our socks

The sand clumped
Our fingers curled
And I tasted salt
Coating your lips

Goose bumps rose
On our arms
And the hairs stood stiff
Like tiny white flags

The air licked wet
We bundled coats tighter
And your fingertips put
Bruises on my skin

You said we’d come back
When the weather
Turned
And Wade barefoot.

The weather turned all right.
But we never did,
Did we?
…………………………..........................................................


Tea Leaves

Amongst the ghosts
Of coffee dates
Gone by
Two old friends met
to share a brew and some moments.

They sat on rickety chairs
out of doors in sticky rai

Shredded tobacco with shaking hands
Into thin bent rollies
And tugged on them to fill their mouths
with anything but words.

Coffee for her and a green tea for him
A long repeated order
a rehearsal of a memory
And do you remember when?
He did.

And how we used to?
She did.

They were great times weren’t they?
They agreed they were.

He tells her he remembers
when she bought those earrings
a flea market wasn’t it?
No it wasn’t she tells him
These were a gift.

Oh.
They were sitting still.
But they knew where they were going.
The cups emptied
the butts smouldered like late night peat
They waited a bit longer
Before paying the bill
Spilling coins on the table like a flood of tears
that just wasn’t coming.

They rose with silent mouths to say
Well
Good luck then
And thanks for it all.

Before dividing paths
They looked smiled again
A shallow curve that didn’t reach the eyes
They brushed hands instead of lips
trading nods instead of love.

(Tea Leaves was originally published in The Sunday Independent)
(https://poethead.wordpress.com/2015/12/19/pillars-and-other-poems-by-alice-kinsella/)
………………………………………...................


 ......................................................................

ফড়িং ক্যামেলিয়া

১.
তোমার মুষ্টিপ্রেম

তোমার মুষ্টিপ্রেম, ভিখেরির জন্য তুলে রাখ বালক,
পুরো রাজ্য, রাজা, রাজ সিংহাসন সব চাই আমার।

বিন্দুতে ভেজা কাক হব না... সিন্ধুতে ডুবে মরব, তাতেও রাজি
যদি ভাব উচ্ছিষ্টে জয় করে নেবে.. তবে তুমি অন্ধ, মূক, বধির ।
যে হৃদয় আফ্রেদিতা হয়ে আছে বহুকাল, সেখানে তুমি অবাঞ্ছিত।

আর যদি পুরোটা দাও, সমস্ত তোমাকেই ,
তবে নোংরা মুজো, চটচটে টিশার্টে খুঁজে নেব প্রেম
তোমার নামে উইল করে দেব সমস্ত জীবন।
.................


................................................................................................................................

২.
রম্য রচনা- 'প্রেম'
#
প্রেম, বড্ড নিষিদ্ধ বস্তুর নাম। মদ, গাঁজা, বারবণিতা পর্যন্ত বাঙালি দেখেও না দেখার ভান করে। কিন্তু প্রেম হলে পাড়ায় পাড়ায় রটে যায় “জলি-বর্ষার” “তিশা-ফারুকির খবর। বাংলাদেশের হকার পর্যন্ত জানে, প্রেমিক জুটিকে ব্ল্যাকমেইল করা আবশ্যক। তাই, তারা জুটিদের আশেপাশেই হাঁকডাকে। কখনো পানির বোতল, কখনো চিপসের প্যাকেট নিয়ে হাজির হয়। 


আজকাল অবশ্য এলিট সোসাইটির জন্য কিছু বাডতি সুবিধা আছে- পিজ্জা-পাস্তা টাইপ খাবার খেতে খেতে বিরক্তিবিহীন আড্ডা দেয়া যায়। এটাও এক ধরনের হকারি। তবে পার্থক্য হলো, ভদ্রতা মোটা পয়সায় মেলে। অনেকেই খানিকটা নাক উঁচু করে বলেন, কাঁচা বয়সের প্রেমে আবেগ থাকে, বিবেক থাকে না। 

আমি বলি , “দাগ না লাগলে শিখবে কী করে”, ভালোবাসা শেখার কোনো স্কুল তো নেই , যা শেখে দেখে দেখে শেখে। ১৪ ফেব্রুয়ারিতে পঁয়ত্রিশ টাকা খরচ করে কলার টিউন কেনে, মেয়েটাকে দেখেই বলে-“ইয়েে, একটা কল দিবা! একেক সময় একেক ভাব আসে। আর সেই ভাবের জোয়ারে ভালোবাসা ভাসে।  ভাসুক না ক্ষতি কী!


ব্লু ফিল্মে আসক্ত হওয়ার চেয়ে একটা মেয়ের সঙ্গে খানিকটা সময় কাটালে সে অন্তত মেয়েদের প্রেমবিষয়ক মানসিকতা জানবার সুযোগ পাবে। বিশেষ করে আমাদের দেশে উঠতি বয়স্ক ছেলেদের খুবই জনপ্রিয় বিনোদন- ব্লু ফিল্ম। প্রযুক্তির কল্যাণে যুক্ত হয়েছে ফোনোসেক্স, ক্যাম-সেক্স নামের ভয়াবহ সব দূষিত অভ্যাস। আমি এই বিষযটা এখনো বুঝি না- ফোনে কথা বলে কিংবা একটা মনিটর স্ক্রিন দেখে কীভাবে যৌনতার অনুভূতি আনা সম্ভব!

এসবের প্রভাবে স্বভাবতই তাদের প্রথম কৌতূহলের বস্তু, নারীর শরীর। মেধা বা মনন সেখানে গৌণ। এখনো ছেলেরা কনে দেখার নামে দেখে নেয় মেয়ে তার চেয়ে স্মার্ট কিনা। যদি হয়, প্রথম দর্শনেই ,“আমি কি এই মেয়ে চেয়েছিলাম টাইপ” এক্সপ্রেশন দিয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যায়। 


ছেলেটার দোষ দেবার সুযোগ কম। ছেলে প্রেম শেখেনি, শিখেছে হিসাবনিকাশ করতে। দুই ছটাক ফর্সার সাথে তিন ছটাক সানি লিওন ও এক ছটাক শিক্ষা মেশালে কয় ছটাক সম্ভাব্য যৌনাবেদনময়ী 'অবলা' মিলবে!

ফিরছি প্রেমে! কিছুদিন আগে বাবার এক কলিগ মোটামুটি উদ্‌ভ্রান্তের মতো বাসায় হাজির হলেন। যেভাবে নিঃশ্বাস ফেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল, নাদুস-নুদুস রুই মাছটাকে কে যেন ডাঙায় আছড়ে ফেলেছে! বাবা বেশ ভয় পেয়ে গেলেন। এই লোকের নাকি বাইপাস হয়েছে মাসখানেক আগে। একটু এদিক-ওদিক হলেই সোজা পরপারে চলে যাবেন।

যাই হোক, পানি-টানি খাওয়ানোর পর ভদ্রলোক যে বক্তব্য দিলেন, তার সারসংক্ষেপ হলো- তার মেয়ে এক ছেলের প্রেমে পড়েছে এবং ওই ছেলেকেই বিয়ে করবে সে। সব ভালো কিন্তু মেয়েের থেকে ছেলে দুই বছরের ছোট। তিনি এই মুখ কীভাবে সমাজে দেখাবেন এই চিন্তায় তার এই অবস্থা! 

এরপরে দু’তিন ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস বৈঠক করে তিনি একটা সমাধানে এসেছেন। সেটা হলো, ছেলের বয়স কাউকে জানানো হবে না। শুনতে পেলাম, যাবার সময় বাবাকে বলছিলেন– “ভাই! মেয়ের জন্য শেষ পর্যন্ত গু হজম করলাম!”


ভালোবাসার এমন বিশ্লেষণে বাকরুদ্ধ হওয়া বাদ দিয়ে কর্ণযুগল রুদ্ধ করে দিলাম। শত হলেও আমি ভালোবাসাবাদি বাঙালি। ভালোবাসার স্বাধীনতা চাই, আবার বাঙালির সামাজিক সংকীর্ণতায়ও আবদ্ধ।

অবশ্য প্রেম খুব ভালো 'বিজনেস'! মোটামুটি একটা প্রেমানুভূতি টাইপ লেভেল সেঁটে দিতে পারলেই পণ্য হিট! সেটা হোক চটের বস্তা কিংবা হজমলা। প্রেম মানেই ব্র্যান্ড হিট। সেটা সচেতন কিংবা অবচেতন যেভাবেই হোক!

একটা গল্প মনে পড়ে গেল-
এক ভণ্ড পীর গেল এক গ্রামে। গিয়েই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিলো- এই গ্রামে ইসলাম দুর্বল। তাই, শান্তি কখনো আসবে না। ইসলাম রে সবল হইতে হবে। তাইলেই শান্তি আসবে! পরদিন গ্রামবাসী সবাই হাজির হলো পীরের দরগায়। বললো- বাবা, আপনি তো মহান, এক্কেবারে জিন্দাপীর। 



পীর তো পুরাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে জিগ্যেস করলেন- কেন, কী হইছে? লোকজন উত্তর দিলো- আমাগো ইসলাম আর শান্তির বহু দিনের প্রেম। কিন্তু শান্তির মায় এমন দজ্জাল যে, এতদিন কিছু করার সাহস পায় নাই। গতকাল আপনার ওয়াজ শুইনা ইসলাম চেইতা গেছে। কয়, কেডা কইছে আমি দুর্বল। বারোখান বাচ্চা পয়দা কইরা দেখায়া দিমু। এই কথা শুইনা শান্তি ইসলামের লগে চইলা আইছে।


পরিশেষে, প্রেমহীন জীবন কলাহীন কলাগাছ! শুধু ভেলা বানানোর কাজে লাগে। বইপত্রের প্রেম দিয়ে সাময়িক ধারণা মিললেও অল্প বিদ্যার সাইড অ্যাফেক্ট (পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই, উপকারিতা বিবেচনায় সামাজিক সংকীর্ণতামুক্ত পরিবেশ, অবশ্যই প্রেমময় পরিবেশ আবশ্যক..!!     
...........................................................................................................................

..............................................................................................................................

সেটেলার সেটেলার সেটেলার সেটেলার সেটেলার সেটেলার সেটেলার সেটেলার সেটেলার সেটেলার সেটেলার


ইমতিয়াজ মাহমুদ
সেটেলার

(১) আফসোস, আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে যেসব অভিবাসিত বাঙালি সেটেলার হিসেবে বসবাস করেন, তাদের প্রত্যেকের চেতনায় একেকটা পাকিস্তানি মিলিটারি বাস করে। আর একেকবার একজন আদিবাসী মেয়ে অত্যাচারের শিকার হয়; তারা মনে মনে একরকম জেহাদি পুলক অনুভব করেন। প্রতিবার একজন পাহাড়ি মেয়ের ওপর অত্যাচার হয়, প্রতিটা সেটেলার পুরুষ মনে মনে সেই নির্যাতনে অংশগ্রহণ করেন।

(আপনি হয়ত বলতে পারেন, সব সেটেলাররা এক রকম নন। আপনি হয়ত ঠিকই বলছেন। পাহাড়ে সেটেলারদের মধ্যে দু-চারজন হয়ত ভালো মানুষ থাকবেন। কিন্তু সংখ্যাগুরুর দায় তারা এড়াবেনই-বা কি করে!)


আপনারা যারা বয়স্ক, আমার মতো এরকম পেন্টাজেনেরিয়ান নন, যারা একাত্তরে আমাদের বীরত্বের পাশাপাশি পাকিস্তানি বাহিনীর ভয়াবহ অত্যাচার-নির্যাতন প্রত্যক্ষ করেছেন; আপনাদের তো মনে থাকারই কথা। আর আপেক্ষাকৃত তরুণ যারা, তারা খানিকটা খোঁজাখুঁজি করলে বইপত্র আর ঐতিহাসিক দলিলে এসব খুঁজে পাবেন।

পাকিস্তানি মিলিটারিরা যখন আমাদের মেয়েদের ওপর নির্যাতন করতো, তার খবর সবাই জানতেন। এই দেশে, আমাদের এখানে লোকে তো জানতোই, পাকিস্তানেও সবাই জানতেন। সেসব খবর দেশি-বিদেশি সব কাগজে ছাপা হতো। কারোই না জানার কথা নয়।

এসব নির্যাতনের খবরে পাকিস্তানের লোকেরা কীভাবে রিঅ্যাক্ট করতো জানেন! আমাদের মেয়েদের ওপর যখন পাকিস্তানের মিলিটারিরা অত্যাচার করতো, তখন পাকিস্তানের অনুগত নাগরিকেরা বেশির ভাগই জেহাদি পুলক অনুভব করতেন, ভাবতো যে, বেশ হচ্ছে, গাদ্দারদের শাস্তি হচ্ছে।


(২) বাঙালি সেটেলার ভাইরাও ঠিক একইরকমভাবে রিঅ্যাক্ট করেন, যখন কোনো আদিবাসী মেয়ে নৃশংসতার শিকার হয়। তখন বাঙালি সেটেলারদের মধ্যে কোনো প্রতিবাদের চিহ্ন দেখবেন না।  না, রাস্তায় নেমে মিছিল-মিটিং ইত্যাদির কথা বলছি না; ঘরোয়া পরিবেশে নিজেদের মধ্যে, না-ফেসবুকে বা আড্ডায় আমরা যে রকম নিন্দা-মন্দ করি, বাঙালি সেটেলাররা সে রকম নিন্দাও করেন না। কারণ, মন থেকে তারা এসব অত্যাচার সমর্থন করেন।

সাধারণ ধর্ষণ বিষয়ক পুরুষ প্রতিক্রিয়া কী জানেন তো! একটি ধর্ষণের খবর শুনলে একদল পুরুষ মনে মনে নিজেকে ধর্ষকের অবস্থানে কল্পনা করে একরকম তৃপ্তি লাভ করেন। কেননা, শত শত বছর থেকে আমাদেরকে এটিই শেখানো হয়েছে যে, নারী হচ্ছে সুস্বাদু খাবার, রসালো ফল, রসগোল্লা বা পানতুয়া, এ রকম।

ধর্ষণ করাকে পুরুষের ভাষায় বলা হয়- ‘খেয়ে দেওয়া’। তো একটা এরকম সুস্বাদু খাবার, আমার আরেক ভাই ‘খেয়ে দিয়েছে’, এটাতে তো আমার ঈর্ষা হতেই পারে। কিন্তু অন্যায় দেখার কিছু তো নেই!

আর দখলদারদের চোখে আদিবাসীদের মেয়েরা কীরকম? শত্রুর বাড়ির গাছের রসালো ফল বা শত্রুর হাড়ির রসগোল্লা। এটা খাওয়া তো জায়েজই! যুদ্ধের তো এটাই নিয়ম। আর ধর্ষণের সাথে যেহেতু ধর্ষিতার পরিবারের মর্যাদা জড়িত থাকে, সে জন্য শত্রুর বাড়ির ছাগল লুটের চেয়ে মেয়ের ইজ্জত লুট বেশি কার্যকর হাতিয়ার বিবেচনা করা হয়।

(৩) পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটেলাররা কী একই রকম মানসিকতা ধারণ করেন! পাহাড়ি মেয়েদের ওপর অত্যাচারের পেছনে কী একইরকম সাইকোলজি কাজ করে? জ্বি, এটিই আমার হাইপোথিসিস! কেউ সিরিয়াসলি স্টাডি করে দেখতে পারেন (কেউ ইতোমধ্যে করেছেন কিনা জানি না)।

সেটেলারদেরকে জিয়াউর রহমান ওখানে যখন নিয়ে গিয়ে বসাতে শুরু করেন, তখন সেটেলাররা কি মনোবৃত্তি নিয়ে গিয়েছিল! ওরা সেখানে আদিবাসীদের জায়গা দখল করে বসবাস করতে গিয়েছে। সেটেলাররা আদিবাসীদের প্রতি ‘ওরা জংলি, অসভ্য, অনুন্নত বর্বর’ এইরকম মনোবৃত্তি নিয়ে গিয়েছে। আদিবাসীরা যখন নিজেদের অধিকার ফলাতে আসে, তখন সেটেলাররা বিরক্ত হয়। আমাদের আর্মি বিরক্ত হয়। আমাদের প্রশাসন বিরক্ত হয়।

এইসব পাহাড়ি জংলিদের এত সাহস! আদিবাসীদের খানিকটা শায়েস্তা করাটাকে বাঙালি সেটেলাররা খুবই যৌক্তিক কাজ মনে করেন। আর এইসব ধর্ষণ তো কোনো ব্যাপারই নয়!

আমরা যখন বিজয় দিবস উদযাপন করছি, ঠিক সেই সময়ে কাপ্তাইতে কী হয়েছে, আপনারা শুনেছেন নিশ্চয়ই। আপনার পরিচিত কেউ যদি পার্বত্য চট্টগ্রামে থাকেন, সেটেলার হোক বা না হোক, তাদেরকে আপনি জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন। একজন আদিবাসী মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলো, আর সেখানকার বাঙালিদের কী প্রতিক্রিয়া!


আর আপনার পরিচিত কোনো আর্মি অফিসার যদি থাকেন সেখানে, তাদের সাথে আলাপ করে দেখতে পারেন। ওদের কথাবার্তা খুবই ইন্টারেস্টিং। পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজ করছে, বাংলাদেশ আর্মির এরকম কোনো ক্যাপ্টেন সাহেবকে আপনি আদিবাসীদের ওপর হওয়া নির্যাতন সম্পর্কে প্রশ্ন করে দেখতে পারেন। জবাব যা পাবেন, সেটি অতি পুরনো- সেই কলোনিয়াল আমলে ব্রিটিশ আর্মির অফিসারেরা ভারতীয়দের সম্পর্কে বা পাকিস্তান আমলে পাকিস্তান আর্মির কোনো অফিসার বাঙালিদের সম্পর্কে যে রকম ভাবতেন, ঠিক একই রকম কথাবার্তা।

(৪) পাহাড়ি মেয়েদের ওপর যে নির্যাতন হচ্ছে, সেটা খুব সহজে বন্ধ হবে না। কারণ, ওরা দুইভাবে আক্রমণের শিকার হন- প্রথমত, মেয়ে বলে। নারীর ওপর পুরুষের প্রথাগত নির্যাতনের অংশ সেটা। দ্বিতীয়ত, আদিবাসী মেয়ে বলে, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর লোকেরা ওদেরকে ‘লুটের মাল’ (গানিমাতের মাল-যুদ্ধজয়ের মাল) হিসেবে বিবেচনা করে।


কিন্তু এর মধ্যেও বাঙালি হিসেবে আমরা কিছু প্রতিরোধ করতে পারি। আপনার পরিচিত যেসব বাঙালি পাহাড়ে আছেন, ওদের জানিয়ে দিতে পারেন যে, আদিবাসীদের প্রতি যারা এসব অত্যাচার করছেন, ওদের আপনি ঘৃণা করুন। আপনার আশেপাশে যদি কোনো সামরিক বা বেসামরিক অফিসার থাকেন, যিনি রাঙামাটিতে কাজ করেন, তাকে বলে দিতে পারেন যে, পাহাড়ি মেয়েদের ওপর যে ধারাবাহিক নির্যাতন হচ্ছে, সেটি অন্যায় এবং এই ধারাবাহিক নির্যাতন ঠেকাতে না পারার ব্যর্থতার জন্য আপনি তাদেরকেই দায়ী করেন।

আমাদের সরকারকে আপনি জানিয়ে দিতে পারেন যে, একটি জনগোষ্ঠীর মেয়েদের ওপর নিয়ম করে ধারাবাহিকভাবে অত্যাচার চালিয়ে যাওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ।

(৫) দেখুন, আমি খুবই আবেগপ্রবণ ধরনের মানুষ। কথায় কথায়, ইমোশনাল (আবেগ তাড়িত) হয়ে পড়ি। কিন্তু এই কথাগুলো বলার সময় আমি চেষ্টা করেছি, যাতে ইমোশনাল না হই। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেছি, অত্যাচারিত পাহাড়ি মেয়েটির কথা মাথায় না আনতে।

আমি ক্রোধ ও কান্না দমন করেই বলছি, আমি আর আপনি যদি আমাদের আদিবাসী মেয়ের ওপর হয়ে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ না করি, তাহলে আপনি, আমি, আরেকজন পাকিস্তানি শয়তানের মধ্যে কী ফারাক থাকলো!

ইমতিয়াজ মাহমুদ- সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী
……………………………………………





সুবর্ণা মুনের ধারাবাহিক গল্প

পর্ব-১.

৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার ছেলেটির নাম দিব্য। প্রচণ্ড আড্ডাবাজ ছেলেটির মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি আর চোখে বুদ্ধিদীপ্ত চাহনি। কিছুক্ষণ পর পর সিগারেট ফোঁকার একটি বদ অভ্যাস ছাড়া দিব্যর আর সবকিছুই প্রশংসা করার দাবি রাখে। সদ্য ছাত্রজীবন কে বিদায় জানিয়ে আরো দশটি ছেলের মতো চাকরির বাজারে নিজেকে ঠেলেঠুলে একটা জায়গা দখল করার আপ্রাণ চেষ্টায় নেমেছে।




এবার আসি মেঘলার গল্প নিয়ে।
মেয়েটি খুব চুপচাপ স্বভাবের। বেশি মানুষ হলে একটু একা একা থাকে। গল্পের বই, গান শোনা, নিজের লেখাপড়া এসব নিয়েই বেশি ব্যস্ত। ছোটবেলা থেকেই চোখে চশমা। ডাক্তার বয়স বাড়ার সাথে সাথে চশমার পাওয়ারও বাড়িয়ে দিয়েছেন। এক হাত দূরের জিনিসও চশমা ছাড়া দেখা কষ্টকর মেঘলার জন্য।

দিব্য আর মেঘলার মধ্যে মিল হলো দুইজনই একই ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট। সম্পর্কে সিনিয়র ও জুনিয়র। দিব্যর লেখাপড়া শেষ। আর মেঘলা পড়ছে থার্ড সেমিস্টার। দিব্যর নোটগুলো মেঘলা এক বন্ধুর মাধ্যমে সংগ্রহ করতো। এভাবেই দুজনের পরিচয়। দিব্য একদিন ঘুরতে আসে ক্যাম্পাসে। মেঘলাকে ফোন দেয়।

কিন্তু মেয়েটি ফোন আর ধরে না। দিব্য ফোন দিতেই থাকে। সে তো আর জানে না মেয়েটি ফোন সাইলেন্ট করে দুপুরের ভাতঘুমে রয়েছে।

আহা বেচারা! এই প্রথম খুব অসহায় লাগে তার। একদিকে মেয়েটির সাথে দেখা করার প্রবল আকাঙ্ক্ষা; অন্যদিকে কিছুটা অপমানবোধ। এরপর ভাবে, সে তো মেয়েটিকে জানায়নি আসার খবর। এটা ভেবেই সে অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু এক সময় প্রবল আকাঙ্ক্ষা অহমের কাছে পরাজিত হয় দিব্য। "এই মামা যাবেন " বলে রিক্সায় উঠে পড়ে সে।


কাঁটা পাহাড়ের ঢালু রাস্তা বেয়ে রিকশা যত স্টেশনের দিকে আগাচ্ছে, বাতাসের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে দিব্যর সামনের চুলগুলোও উড়ছে আর তার সাথে একটা অপমানবোধটাও প্রবল বেগে বাড়তে থাকে। 


কেমন রাগ হয় নিজের ওপর। মনে মনে বলতে থাকে "জুনিয়রদের বেশি পাত্তা দিতে নেই। পাত্তা দিলেই এরা মাথায় উঠে বসে। "এদিকে মেঘলার ঘুম ভাঙতেই কয়টা বাজে দেখার জন্য ফোন হাতে নিয়েই দেখে দিব্যর ২০ মিসড কল। সাথে সাথেই সে ফোন ব্যাক করে। নিজের মুণ্ডুপাত করে সে দিব্যকে ফোন দেয়। দিব্যর মোবইলের স্ক্রিনে মেঘলার নম্বর ভেসে ওঠে।

দিব্য অনেক কষ্টে নিজের রাগ সামলে বলে- "কোথায় ছিলে? আমি তো ক্যাম্পাসে এসেছিলাম। "ঘুম জড়ানো কণ্ঠে মেঘলা বলে- "সরি, আমি ঘুমে ছিলাম। ভাইয়া, আমি সত্যি, সরি। প্লিজ, আপনি একটু অপেক্ষা করুন। আমি ৫ মিনিটের মধ্যে আসছি " দিব্য জানায়, সে চলে যাচ্ছে। মেঘলা রাগটা বুঝতে পারে দিব্যর গলা শুনে। বলে, "প্লিজ ভাইয়া, শুধু ৫ মিনিট সময় দিন। প্লিজ। "খুব অনুনয়ের সুরে বলে মেঘলা।

দিব্য এবার একটু কৃত্রিম অভিমানের সুরে বলে "ঠিক আছে। ৫ মিনিটের মধ্যে পারলে আসো। আমার হাতে সময় বেশি নেই। আমি ঝুপড়িতে বসছি।" "থ্যাঙ্কস ভাইয়া" বলেই মেঘলা ফোন রেখে দেয়। 

কিছুক্ষণ পর মেঘলা আসে দেখা করতে। সামনাসামনি এই প্রথম তাদের দেখা। মেঘলা এসেই কান ধরে বলে, "সরি ভাইয়া। এতগুলো ফোন করলেন, অথচ আমি ধরতে পারিনি। আমি খুবই লজ্জিত আমি।" 

মেঘলাকে দেখার পর পরই দিব্যর মেজাজ কেমন যেন শান্ত হয়ে যায়! রিকশায় বসে জুনিয়রদের সম্পর্কে মনে করা সমস্ত ধারণা ভুল মনে হয়।  কথা বলতে বলতেই দিব্য টের পায়, মেয়েটির চোখ ভীষণ মায়াকাড়া। কিন্তু চশমার কারণে তা ঢাকা পড়ে গেছে। আর হাসিটাও খারাপ না। দেখে মনে হচ্ছে, মেয়েটিকে হাসিতেই মানায়।

এর মধ্যে টিপ টিপ বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। দিব্য বলে, " চলো তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি। "ছাতা না থাকায় দুইজনই কিছুটা ভিজে গেছে। মেয়েটির চশমা ভিজে যাওয়াতে এখন সে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। তাই, সে চশমাটা খুলে ব্যাগে রেখে দেয়। যেহেতু, চশমা ছাড়া সে সব কিছুই ঝাঁপসা দেখে। ফলে এবার শুরু হলো তার হোঁচট খাওয়া। 

মেয়েটির এরকম হাঁটা দেখে দিব্য হাসিতে গড়িয়ে পড়ে। আর মেঘলা সিনিয়র ভাইয়ের মুখে অট্টহাসি শুনে বিব্রত ভঙ্গিতে মাথা নিচু হেঁটে চলে। 

মেয়েটার হোঁচট খাওয়া দেখে দিব্যর এবার খুব মায়া হলো। ইচ্ছে করছিল মেঘলার হাতটা ধরে ওকে হলে পৌঁছে দেয় কিন্তু হুট করে তো একটা মেয়ের হাত ধরতে পারে না। তার ওপর জুনিয়র মেয়ে। দেখা যাবে, সে হেল্প করতে গিয়ে আবার অন্য কোনো উপাধি পেয়ে বসবে। "এত হাবাগোবা কেন মেয়েটা! থাক বাপু। দরকার নেই হেল্প করার।" এটাই ভাবে দিব্য।

হলের কাছাকাছি আসতেই ছোটখাটো একটা ভাঙা যায়গায় প্রচণ্ড জোরে হোঁচট খায় মেঘলা। দিব্য সাতপাঁচ না ভেবেই হেঁচকা টান মেরে মেঘলাকে সরিয়ে আনে। "এই মেয়ে, দেখতে পাও না! যদি পড়ে যেতে, হাত পা ভাঙতো!" দিব্য বলে ওঠে। 

"দেখতে পাইনি" খুব আস্তে করে বলে মেঘলা। হাতটা কিন্তু তখনও ধরে আছে দুইজনেই। দিব্যর মনে হলো, হাতটা ছাড়া যাবে না। ছাড়লেই মেয়েটি কোথাও না কোথাও পড়ে যাবে। এই হাবাগোবা মেয়েটাকে কখনই একা ছাড়া যাবে না। কখনোই না। এটা ভেবেই সে আরো জোরে মেঘলার হাত চেপে ধরে। মেঘলাও হাত না ছাড়িয়ে পরম নির্ভরতার কথাই জানিয়ে দেয়। সন্ধ্যার আলো-আঁধারির চবি ক্যাম্পাস আর টিপ টিপ বৃষ্টি এই নতুন প্রেমের সাক্ষী হয়ে থাকে। 





পর্ব- ২.
"এই, আমি একজনের ওপর ক্র্যাশ খেয়েছি। জানো, ছেলেটার সাথে আমার একটা মিল আছে।  আমিও চশমা পরি; ছেলেটাও চশমা পরে। ছেলেটার অসাধারণ সানাই বাজানো, তার ওপর আমার ক্র্যাশ খাওয়ার অন্যতম কারণ।"  চট্টগ্রামগামী বাসে বসে দিব্যর চোখে বার বার এই লেখাগুলো ভেসে উঠছে। গতকাল রাতে মেঘলার পাঠানো এই টেক্সট পেয়ে একেবারে খুব চুপ হয়ে গেছে সে। বিশ্বাসই করতে পারছে না সম্পর্কের এক মাসের মাথায় মেঘলা এরকম কিছু বলবে! তাদের মধ্যে কোনো ধরনের ঝগড়াও তো হয়নি। আর এরকম কিছু ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি দিব্য। সবচেয়ে বড় কথা, মেঘলা এই ধরনের মেয়েও না। তাহলে এই ম্যাসেজের মানে কী!

আজ সারাদিন সে অফিসে মন দিতে পারেনি। মেঘলাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করবে করবে করেও কিছু বলতে পারেনি। শেষমেশ একদিন মানসিকভাবে অনেক অস্থিরতার মধ্যে থাকার পর মেঘলাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করবে বলে রাতের বাসেই চট্টগ্রাম রওয়ানা হয়েছে দিব্য। চলন্ত বাসে দিব্য মোবাইলের দিকে তাকাতে পারে না। মাথা নাকি ঘোরে ওর। অথচ আজ ঠিকই মেঘলার পাঠানো ম্যাসেজ দেখছে একটু পর পর।  ভালোবাসা কি এতই সহজ! নিজের ভালোবাসার মানুষকে কীভাবে অকপটে বলতে পারে অন্য ছেলের কথা! তাহলে কি মেঘলার ভালবাসা ঠুনকো ছিল?

মেঘলার জন্য তড়িঘড়ি করে ঢাকায় একটা চাকরিতে জয়েন করেছে দিব্য। আরো ভালো একটি চাকরির জন্য দিনরাত নিজেকে তৈরিতে ব্যস্ত ছিল দিব্য। সবকিছুই শুধুমাত্র মেঘলার জন্যই। আর কিছু ভাবতে পারছে না সে। মুখটা খুব তেঁতো লাগছে। একটা সিগারেট ধরানো দরকার ছিল। "দেখ, এটা তোমার শরীরের জন্যই খুব খারাপ। নিজেও সেটা বুঝতে পারো। একদিনে ছেড়ে দেয়া তো সম্ভব না। কিন্তু ধীরে ধীরে ছেড়ে দেবার চেষ্টা করো। কেমন!" সিগারেট ধরাতে গিয়ে মেঘলার বলা কথাগুলো কানে ঘণ্টার মতো বাজতে থাকে দিব্যর কানে। সিগারেটটা আর ধরাতে পারে না সে। 

কিছু সময় পর বাসের ভেতর থেকে কোনো একটি ছোট্ট শিশুর কান্নার শব্দ ভেসে আসে। "এই, আমাদের বিয়ের পরে ছেলে হলে নাম রাখবো- তোজো।" মেঘলার মুখে এ কথা শুনে দিব্য বলেছিল, "তখন তোমাকে আর মেঘলা না ডেকে তোজো'র মা ডাকবো। চলবে! "


১০ মিনিট পর মেঘলা আসে। হাতে একটা ব্যাগ। দারুন একটা গন্ধ নাকে এসে লাগে দিব্যর। পায়েস রান্না করেছি" মেঘলার মুখে একথা শুনে খুব অবাক হয় দিব্য। কারণ, মেঘলা কিছুই রান্না করতে জানে না। তখনই খেয়াল করে মেঘলার হাতে সাদা মলম লাগানো। জিজ্ঞেস করতেই বলে- "কিছু না। অল্প একটু গরম পায়েস পড়েছে হাতে। "মেঘলা ব্যাগটা টেবিলে রেখে এবার তার ফোনটা বের করে একটা ছবি দেখায়। দিব্য দেখে, একটা ভিডিও থেকে স্ক্রিনশট নেয়া ছবি, যেখানে একটা ছেলে সানাই বাজাচ্ছে। পাশে ছোট করে লেখা "কোক স্টুডিও। "

মেঘলা এবার বলে- "এই হচ্ছে আমার ক্র্যাশ।" দিব্য কিছু না বলে মেঘলাকে দেখছে। কথা হারিয়ে ফেলেছে যেন সব! যা যা ঠিক করে এসেছিল, তার কিছুই বলতে পারে না সে। "শুভ জন্মদিন, দিব্য সাহেব!  আপনার জন্য নেট ঘেঁটে কাল রাত জেগে আপনার পছন্দের পায়েস রান্না করেছি। আমি জানতাম, আপনি এই ম্যাসেজ দেখলেই চলে আসবেন। আপনাকে এইদিনে পাশে পাবার জন্য মিথ্যে কথা বলেছি।"

দিব্য কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। মেঘলার সব কথা কেমন ঘোলাটে মনে হয়! "এইবার ক্ষমা করে দাও। আর কখনো এরকম মিথ্যে বলবো না, সত্যি! কথাগুলো দিব্যর হাত ধরে বলে মেঘলা। কেমন ভাঙা গলায় দিব্যর মুখ থেকে "তুমি ভাই, সেই " কথাটি ফস করে বের হয়ে যায়। "সরি" খুব ছোট স্বরে মিষ্টি হেসে বলে মেঘলা। দিব্যর মনে হয়, এই পাগল মেয়েকে দূরে রাখা যাবে না। খুব তাড়াতাড়ি এই মেয়েকে কাছে নিয়ে যেতে হবে। নয়ত প্রতিবার এরকম একেকটা কাণ্ড ঘটিয়ে তার আয়ু কমিয়ে দেবে। ওর অনেক আয়ু দরকার। সুস্থ থেকেই এই মেয়ের সাথে বাকি জীবনটা কাটাতে হবে। মেঘলার জন্য মায়া হয় ওর খুব। আহা রে! মেয়েটা রান্না করতে গিয়ে হাতটাই পুড়িয়ে ফেলেছে।

একটা ছোট প্যাকেট এবার দিব্যর দিকে এগিয়ে দেয় মেঘলা। প্যাকেট খুলতেই ভেতর থেকে একটা সুন্দর অ্যাশট্রে বের হয়। মেঘলা বলে- "সিগারেট ছাড়াটা তোমার জন্য কষ্টের সেটা আমি জানি। কিন্তু আমি চাই, তুমি এই বাজে অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসো। তাই, ভাবলাম অ্যাশট্রে দেখলে আমার কথা মনে পড়বে। আর তুমি তাড়াতাড়ি সিগারেট থেকে দূরে চলে আসবে। আমার জন্য এতটুকু কি করতে পারবে না?" খুব মায়া নিয়ে কথাগুলো বলে মেঘলা।

ওই মুহূর্তেই দিব্যর মনে হয়, এই মেয়ের জন্য সে সবকিছু করবে। সিগারেট ছেড়ে দেয়া তো কোনো ব্যাপারই না। সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে যে কোনো মূল্যে এই মায়াবতীকে ভালো রাখতে হবে। চোখে পানি এসে যায় ওর। কোনোমতে চোখের পানি লুকানোর বৃথা চেষ্টা করতে করতে দিব্য দেখে, একটা মেয়ে তার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে ওকে পায়েস বেড়ে দিচ্ছে। জীবনটাকে অন্যরকম ভালো লাগে তার!
(০৩/১১/২০১৫)



পর্ব- ৩ 
ঝুপড়িতে বসা মেঘলা খুব অবাক হয়ে টেবিলের ওপরে রাখা চকলেটের প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে আছে। সে বিশ্বাসই করতে পারছে না দিব্য তার জন্য এই চকলেটগুলো এনেছে। সে একবার চকলেট, আরেকবার সামনে বসা দিব্যর দিকে তাকাচ্ছে। দিব্য মনে মনে খুব খুশি হয়েছে, মেঘলাকে চমকে দিতে পেরে। মেঘলার হাসিমুখ যে এতটা তৃপ্তি দিতে পারে ওকে, তা আজ আবার নতুন করে জানলো। মেঘলা অনেকবার চেয়েও দিব্যর কাছ থেকে চকলেট আদায় করতে পারেনি। কিন্তু, মেয়েটা যে এত খুশি হবে, সেটা জানলে দিব্য আরো আগেই চকলেট গিফট করতো।  চকলেট না দেবার পেছনে দিব্য সব সময় একটা কারণই দেখাতো। মেঘলার সুন্দর দাঁত নষ্ট হয়ে যাবে।

আজ দিব্য আর মেঘলার পুরো দু’মাস পর দেখা। ক্যাম্পাসে একটা ঝামেলা লেগে হুট করে অনির্ধারিত দিনের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় মেঘলা ওর বাড়িতে আর দিব্য ছিল ঢাকায়। তাই, প্রায় দু্ই মাস তাদের মধ্যে কোনো দেখা-সাক্ষাৎই হয়নি। আজ দিব্য এসেছে ক্যাম্পাসে দেখা করতে। এই দুই মাস খুব খারাপ ছিল মেঘলা। দিব্যকে দেখার জন্য ফোনে খুব কান্নাকাটি করতো। দিব্যরও খারাপ লাগতো। কিন্তু তার চাপা স্বভাবের কারণে মেঘলাকে সেটা বুঝতে দিতো কম।

-"এই, সত্যি সত্যি এইগুলো আমার"
মেঘলার অবাক প্রশ্ন দিব্যকে। "না। তোমার না। তোমাকে 
দেখানোর জন্য এনেছি। "ভেংচি কাটে দিব্য।
মেঘলা খুব জোরে হেসে ওঠে। "এই, তুমি জানো, তোমার সাথে একটু কথা বললেই আমি যে অনেক ভালো থাকি!" মেঘলা বলে।
"তুমি জানো, তোমার সাথে কথা বললে আমার মাঝে মাঝে মেজাজ খারাপ হয়!" মেঘলাকে রাগিয়ে দেওয়ার জন্য এ কথা
বলে দিব্য। একথা শুনে মেঘলা আরো গড়িয়ে পড়ে হাসিতে। "এই, চলো না, একটু হাঁটি! অনেকদিন হয়, একসাথে হাঁটি না” মেঘলার এ কথা শুনে চায়ের বিল দিয়ে ঝুপড়ি থেকে বের হয় দুজন। হাটঁতে হাটঁতে লাইব্রেরির সামনে আসে তারা। মেঘলা হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলেই চলেছে।  দিব্য আবার কথা বলে কম, শোনে বেশি। আর মেঘলার পাল্লায় পড়লে দিব্যর কোনো কথা বলার জো-ই থাকে না।

"এই, বিরক্ত হচ্ছো নাতো!” মেঘলার এ কথাটা দিব্যর খুব প্রিয়।
মেঘলা বলে- "চলো একটু বসি কোথাও।"বসার পর পরই মেঘলা হঠাৎ চুপ হয়ে যায়। এটা খেয়াল করে দিব্য।

"কী ব্যাপার! চুপ হয়ে গেলে কেন? "দিব্য বলে। "কিছুদিন আগে একটা মুভি দেখেছি। একজন বয়স্ক লোক তার বউকে অনেক ভালোবাসে। বউয়ের বাচ্চা হয় না দেখে পরিবারের লোকেরা আবারও তাকে বিয়ে করতে বলে। কিন্তু লোকটা বিয়ে করে না। শেষ বয়সে লোকটার বউয়ের গলায় ক্যান্সার হয়। তাতে তার বউয়ের কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। লোকটার একটা বড় দুঃখ ছিল, মৃত্যুর আগে তার বউ কী বলতে চেয়েছিল, তা সে বুঝতে পারেনি।" কেমন কাঁপা কাঁপা গলায় বলে মেঘলা।



এটুকু বলে সাথে সাথেই দিব্যর হাত চেপে ধরে।" ওই লোকের মতো ভালোবাসা আমি চাই না তোমার কাছ থেকে দিব্য। কিন্তু মরার আগে তোমাকে ভালোবাসি এই কথা বলে আমি মরতে চাই" বলেই কেঁপে ওঠে মেঘলা। দিব্য বুঝতে পারে মেঘলা কান্না করছে। কোনো কথা না বলে মেঘলার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে। টিস্যু বের করে দেয় মেঘলাকে। একটা দীর্ঘনি:শ্বাস বের হয়ে আসে দিব্যর। "মেয়েটা এত আবেগী কেন! আমাকে কেন এত ভালোবাসে! ওপরওয়ালা না করুক, কোনোদিন যদি আমার কিছু হয়ে যায়, তাহলে এই মেয়ে কী করবে তখন!" ভাবতে ভাবতে দিব্যর মনটা কেমন ভারী হয়ে যায়। কিছু একটা জিনিসের খোঁজে এদিক-ওদিক তাকায় দিব্য।

হুট করে মেঘলার পায়ের দিকে চোখ চলে যায়। পায়ে হাত দিতেই মেঘলা চমকে উঠে বলে- "এই, কী করছো তুমি!"

"এইটা একটু খুলে দাও তো আমাকে।" মেঘলার পায়ের আংটির দিকে ইশারা করে দিব্য।

আংটি খুলে দিব্যর হাতে দিতে দিতে "কী করবে এটা দিয়ে " জিজ্ঞেস করে মেঘলা। মেঘলার হাতটা টেনে বাম হাতের অনামিকায় পরিয়ে দিতে দিতে বলে "যেহেতু আমি আংটি আনিনি, তাই এটা পরিয়ে বাগদান সেরে রাখলাম এই ক্যাম্পাসে। আজ থেকে তুমি আমার বাগদত্তা। আর শোনো, তোমার চোখে কখনো যেন পানি না দেখি! তোমাকে ভালবেসেছি, যাতে সবসময় হাসিখুশি থাকো। তোমার কান্না আমার সহ্য হয় না একদম, মনে থাকে যেন!"

মেঘলার চোখের দিকে তাকিয়ে এ কথাগুলো বলে দিব্য। মেঘলার কাছে স্বপ্ন মনে হয় পুরো সময়টা। সময়টাকে ওখানে থামিয়ে রাখতে পারলে এখন সেই কাজটাই করতো সে। কোনোমতেই কান্না আটকাতে পারে না মেঘলা। "এখনোও কান্না থামাবে না!" মেঘলার গাল বেয়ে গড়ানো পানি মুছে দিতে দিতে বলে দিব্য। "ঠিক আছে। আর কাদঁবো না। তবে কথা দিতে হবে, এখন থেকে যখনই আমার সাথে দেখা করতে আসবে, তখনই অনেকগুলো চকলেট নিয়ে আসবে। ওকে!" বলেই একটা মিষ্টি হাসি দেয় মেঘলা। "হুম, তোমাকে দেই আর লোকে আমাকে বলুক দিব্যর বউ ফোঁকলা, ওসব হবে না।" দিব্য বলে।

"চলো, হলে পৌঁছে দিয়ে আসি তোমাকে। আর শোনো, অনেকদিন পর পর দেখা হয় আমাদের। আর যদি চোখে পানি দেখি, আমি কিন্তু আর আসবো না দেখতে!" দিব্যর মুখে এটা শুনে মেঘলা বাচ্চাদের মতো মাথা নেড়ে সায় দেয়।একসাথে কাটানো এই মধুর সময়কে বুকে নিয়ে একে অপরের হাত ধরে শীতের ক্যাম্পাসে আস্তে আস্তে এগোতে থাকে হলের দিকে ওরা।
১৯/১২/২০১৫

(চলবে)



..............................................................................



প্রামাণ্যচিত্র                                              
বাংলাদেশ: ভিডিওচিত্রে জন্মযুদ্ধ
....................................
১৯৪৭ থেকে ৭১। বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা এবং সাম্যবাদের বিশ্বব্যাপী আন্দোলনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে স্বায়ত্বশাসনের আন্দোলনের চরিত্র বদলে যায়। রূপ নেয় স্বাধিকার আন্দোলনে। ৬৬-তে ছয়দফা দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলেন পূর্বসূরী মাওলানা ভাসানীকে পেছনে ফেলে সামনে চলে আসেন শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধিকার আন্দোলনে অসম্প্রাদায়িকতা ও সাম্যবাদ যুক্ত হয়, সে সময় নিষিদ্ধথাকা কমিউনিস্টপার্টির ত্যাগী নেতাকর্মীদের ত্যাগে। শেষে শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে যান অবিসংবাদিত নেতা। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে দেওয়া তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে শেখ মুজিব থেকে হয়ে যান, বঙ্গবন্ধু। তাঁর ভাষণের পরই ছাত্রলীগ ও কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্রইউনিয়নের সদস্যরা পুরো মার্চ মাস জুড়ে মুক্তিযুদ্ধের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে থাকেন।

এলো ২৫ মার্চ। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। আর বাংলাদেশে শুরু হয়- পাকিস্তানি বাহিনীর ‘অপারেশন সার্চলাইট’।

বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার পর রেডিও পাকিস্তান হয়ে যায়, স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র। সে বেতার কেন্দ্র পুরো নয়মাস জুড়ে মুক্তিযুদ্ধকে উজ্জীবিত করে রাখে। সে সবের ভিডিওচিত্র নিয়ে এই প্রামাণ্য দলিল- বাংলাদেশ: জন্মযুদ্ধ।




                                     

     
        - Sounds of War (Part-01)
        - Sounds of War (Part-02)
        - Sounds of War (Part-03)
        - Sounds of War (Part-04)
        - Sounds of War (Part-05)
        - Sounds of War (Part-06)
        - Sounds of War (Part-07)

            .....................................................
           .....................................................


     










                                ..................................................

       মুক্তিযুদ্ধের পর এক সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন বঙ্গবন্ধু। অন্য সামরিক কর্মকর্তার মতোই পেছনে দাঁড়িয়ে জিয়া
    • আমার আদেশে, জিয়ার নয়- বঙ্গবন্ধু (ভিডিও)

    ..........................................................................................................................
    গ্রুপ                                       সাহিত্য অঞ্জলি
    ফেসবুক                                          https://www.facebook.com/groups/ashishbiswas/
    ব্লগার                                        http://shahittoanjoly.blogspot.com
    ওয়ার্ডপ্রেস                                 https://shahittoanjoly.wordpress.com
    টুইটার                                                   https://twitter.com/ShahittoAnjoly
    মেইল                                       shahittoanjoly@gmail.com
    .........................................................................................................                                    (ব্যবহৃত ছবি- ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)

    No comments:

    Post a Comment