...................................................
সাহিত্য
অঞ্জলি
শীতসংখ্যা
গল্প
. যাপনের জীবন উম্মে হাবীবা মায়া
. গল্পগুলো ভালোবাসার শরীফ সুজন
আকাশের ঠিকানায় চিঠি দিলাম আলী আফজাল সুজন
. ছোট বউ হিমাংশু দেব বর্মণ
কবি হেলাল হাফিজের প্রতি আবু বাসার আখন্দ
প্রবন্ধ
সৃষ্টি ও
নির্মাণ মঈন চৌধুরী
কবিতা
ইঁদুর দৌড় বারুনি বিশ্বাস
নির্লিপ্ততা কান্তা রেজা
সভ্যতা অসীম ঘোষ
দাহ দুখাই রাজ
দুঃখকষ্ট মঈন চৌধুরী
যাচ্ছো যাও, যতদূর পথ খোলা
পাও রূপকথা রুবি
আমার মা কবি ছিলেন ভাস্কর চৌধুরী
যেখানে আকাশ নীল এফ জে মুমু
আমি যখন সাহসী হই মাহফুজুর রহমান
অবকাশ শরীফ সুজন
নতুনখাতা জান্নাত রুহি
কবিতা সুমন মজুমদার
স্মৃতির সেই পথে আবারো হাঁটাহাঁটি সাগর জামান
আতঙ্ক তাহমিনা শাম্মী
পাহাড়ি ঢলের
চাঁদ একমুঠো পেঁজা তুলো আশিস বিশ্বাস
একটা শুদ্ধ মানুষের দরকার আরিয়ান স্ট্যালিন
রম্য
রহিমার আত্মহত্যা এঞ্জেল মোনালিসা
আদিত্য সেন নচিকেতার গান (অনুলিখন-সুমন
কায়সার)
................................
এই যে আজ শহর
ছাড়ছি, যদি
না ফিরি! এই
ঢাকা মোড়ে ভাষাণী হোটেলের মোগলাই পরোটার ঘ্রাণ আমার নাকে এসে আছাড় খাবে না। আইডিয়াল
লাইব্রেরি। ফ্রকপরা
বয়সে যেখান থেকে বই কিনে পড়ে পড়ে এমন মন্দ হয়েছি। গরমের দুপুরে পা পা করে এসে বলা হবে না, আজ
খুব পান করতে চাই। বেশুমার
সুখে পাগলা হতে হবে। খুলুন
খুলুন, ছিপি
খুলুন বোতলের। স্বচ্ছ,
ছোট সাদা গেলাসে শীতল পানিকে শরাব নামকরণ শেষে একপেগ দু'পেগ
করে পাঁচ নম্বরটা চালান দিয়ে নেশাখোরের মতো কবিতা পড়া হবে না।
চলমান
পরিস্থিতি নিয়ে সরকারি দল করা জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সাথে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হওয়া হবে না। ইসাহাক মৌলানা
আমার ছোট চুলের ছবি দেখে ‘মারহাবা’ ‘মারহাবা’
করবে না! বাবুল
টেইলার্স আর চায়ের দোকানটার সামনে ওই উঁচুতে বিলবোর্ডে বাংলালিংকের ছেলেটাকে দেখার
সময় লজ্জা পেতে হবে না।
সকাল দশটার
ছাদ অল্প ক’টা
ভাতে কাক দিয়ে ভরে যাবে না। যেসব কাকেরা এখন আমার সবক’টা জামার রঙ
চেনে। শূন্যহাতে
এলেও উড়ে এসে সঙ্গ দেয়।
কিন্তু যদি
ফিরি! এই শহর, ঢাকামোড়, পাড়ার
বিস্তর অলিগলি,
ঘরেবাইরে, কোত্থাও আর নিজের পায়ের ছাপ দেখতে পাবো না। অন্য শহরের পথ
যে পায়ের জন্য অপেক্ষমাণ, সে পায়ের মানুষ এমন পিছুটান পুষতে পারে না। তাকে সামনে
হাঁটতে হবে,
বেসুমার বিগতদের মাড়িয়ে মাড়িয়ে আগাতে হবে।
আগে ভাবতাম,
শহরের বৃষ্টি বুঝি মোহনীয় হয় না। উঁচু দালানগুলি অহেতুক দম্ভে মাথা তুলে থাকে। রোদে পুড়েও রঙ
মরে না,
জৌলুস কমে না। অথচ এখানে তেমন নয়। শহরের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে মফস্বলের গন্ধ ধরে রেখেছে বুড়িগঙ্গা পাড়ের
এই তল্লাট। সেই
কোন ভোর থেকে জানালাগুলি বৃষ্টি দেখছে আজ। কী যে রঙ্গ করছে বৃষ্টি! এই কমে আসছে তো, এই ধরে। একটা টিয়ে-রঙ
ঘাসফড়িং জানালার গ্লাসটায় এসে বসতেই চোখাচোখি হলো। মসজিদের টিনের চালে বৃষ্টির জমজমাট গান ফড়িংটাও
শুনছিল আমার সাথে। জ্বরের
নিকুচি করে,
মনে মনে বেড়াল পায়ে ছাদে গিয়ে পতাকার মতো রোদের বদলে যেই পুড়তে
শুরু করলাম বৃষ্টিতে, দেখি, বজ্জাৎ
ফড়িংটা পাখনা দুটিকে দুদিকে ঈষৎ ছড়িয়ে ছাদের একপাশে ভিজছে। মনকে ফের জানালায় এনে স্থির করে, পাতলা
ঘুমের স্বপ্নে ডুবে গেলাম। ঘুমের ভেতর গলার নিচটা একবার স্পর্শ করলাম। মনে হলো, খুব
করে জ্বর আসবে। থার্মোমিটার
একশো পাঁচ শো করলেও আসল জ্বর হবে ছয় পয়েন্ট পৌনে চার।
স্বপ্নের
শহরটাকে চিনি না। প্রথমবার
গেছি বলে সবকিছু আগ্রহী চোখে দেখছি। অদূরে এক উপাসনালয় ভিন্ন ধর্মালম্বীদের। এত
মনোরম! কিছু যুবক উলঙ্গ হয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। তাদের চেহারায় উদ্যম। শিবের অন্ধ
অনুসারী হবার নিমিত্তে এরা বস্ত্রের বাহুল্যতা থেকে মুক্ত করেছে নিজেদের। তবে বস্ত্রের
বদলে পাতলা কাদার প্রলেপ ছিল সবার গায়ে। ওদের ছাড়িয়ে হাঁটাপথে যেখানে গিয়ে
থেমেছি, সেখানে কোনো এক বাড়িতে আমার প্রেমিকের বাস। পায়ের তালুতে মন রেখে, মাটি
শুঁকে শুঁকে এ গলি থেকে সে গলি তার চলাচলের চিহ্ন খুঁজছি। কোনো ঘরের খোলা জানালা দিয়ে ভেতরে হাওয়া
এলেই চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিচ্ছি। তার সবকটি ঘেমো শার্টের গন্ধ আমার চেনা। তার বাবার কথার টান, মায়ের
রান্নার ঘ্রাণ সবটা জানা।
ভেতরবাড়ি
যাবার দরজা নেই এমন এক বাড়ির কাছে এসে মনে হলো, এই তার বসতভিটে। আমার এখানেই
স্থির থাকা কর্তব্য। মনে
হলো, একটু পরই সে তার ঘর থেকে বেরিয়ে উঠোন মাড়াবে। তারপর বেরিয়ে যাবে প্রাত্যহিক সান্ধ্য-আড্ডার
দিকে। দমে
দমে তার নাম ডাকছি। সে
কখন কত সময় পর বেরিয়েছিল মনে নেই। আমাকে দেখে
চমকেছিল কিনা তাও মনে নেই। শুধু বিদায়ের কাল মনে আছে। এমন মনে আছে যেন পাথরে খোদাই করা!
সে আর আমি
হাঁটছি, আমার
ফেরার পথের দিকে। প্রায়
ব্যস্ত একটি রাস্তায় সে আমাকে চুমু করতে শুরু করলো। গালে, কপালে, নাকে, চোখে, চিবুকে, গ্রীবায়, পর
পর অস্থির চুমু নয়, বরং
যত্নের সাথে,
থেমে থেমে, পর্যাপ্ত অনুভূতির উপস্থিতিতে। প্রকাশ্য
চুমুতে আপত্তি জানাবো যে হাতে, সে হাত তখন অসাড়। তার ঠোঁটে ছুঁয়ে যাওয়া সর্বত্র
ম্যাগনোলিয়া ফুটে উঠছিল। দোলন
চাঁপার সুবাস ছড়াচ্ছিল।
আলস্যের দিনে
এমন স্বপ্ন বড় রসদ জোগায় যাপনে। আসক্তি নিয়ে বিছানায় পড়ে থাকতে থাকতে সকাল দুপুর বিকেল সব খতম। সন্ধ্যার পর
বেরুলাম। পাঁচ
বাড়ি পরেই যে মাজার, সেখানে ওরসের মেলা বসেছে। ঝুপঝুপ বৃষ্টি, পলিথিনে
মোড়া দোকান-পাট,
দর্শনার্থী, সবাইকে ভেজাচ্ছে। ভক্তিমূলক গানের সাথে যে সুরটা বাজছে বাঁশিতে, সেটা
তেমন কাতর করতে পারছেনা মনকে। কিন্তু যতবার বাড়ি পড়ছে ঢোলে, খোলের ভেতরের
লুকানো হাহাকার সব বেরিয়ে আসছে। বর্ষার নদী ভরা পোয়াতির মতো, জোড়ায় জোড়ায়
নৌকা তাতে দুলছে। তেলের
কুপি জ্বালিয়ে মজমা চলছে, সব নৌকায়। আগরবাতির ধোঁয়ায় ঘ্রাণে বুড়িগঙ্গাকে মনে হচ্ছে মুর্দা। ইচ্ছে করছিল
চড়ে বসি সেসব নৌকার কোনো একটায়। তাদের চোখে জীবন দেখি। বৃষ্টি নামুক জোরেসোরে, ওরসের
মেলাটা আরও ভিজে যাক। একলা
ঘরের বিছানা রেখে,
অচেনা মানুষদের সাথে, নদীর বুকে চড়ে
কাটুক একটা রাত!
..........................................
গল্পগুলো
ভালোবাসার
শরীফ সুজন
- আমি চলে
যাচ্ছি ... ও হ্যালো! তুমি কি শুনতে পাচ্ছো? ধ্রুব?
- পাচ্ছি তো।
- তাহলে কথা বলছো
না কেন?
- চলে যাওয়া তো
দেখার, শোনার
কি আছে নোটন?
- ও, এখন আমাকে
তোমার সামনে এসে তোমাকে দেখিয়ে চলে আসতে হবে?
- হ্যাঁ, এই
প্রথম ঠিকঠাক বুঝলে।
- কী! ওকে, ওকে!
আমি আসছি এক্ষুনি,
অপেক্ষা করো।
সেদিন কিন্তু
নোটন আসেনি।
কোনোদিনই আসেনি। তাই, নোটন এখনও বর্তমান ধ্রুবর কাছে। নোটন মানে অসহ্য এক ভালোবাসা! একটা
ধ্যান। নোটন
মানে অপেক্ষা। নোটন
মানে, ও
আসবে আমাকে বলেছে ও...
তাই, রাতুল
অপেক্ষা করছে হিমশীতল ঘরের বাইরে দরজার ওপাশে ২৪ বছরের সেই অপেক্ষার লাশ নিয়ে। নোটন আসছে
মেঘের বাগানে উড়ে,
মেঘ চাদর নিয়ে শেষবার দেখতে।
আজ কিন্তু
ধ্রুবই চলে যাচ্ছে। নোটনকে
কেউ বোঝাতে পারিনি!
.........................................................
আলী আফজাল খান
আকাশের
ঠিকানায় চিঠি দিলাম
প্রিয় আত্মা,
হীরার আগুনে
জ্বলে হৃদয়,
রক্তচোষা বাদুর নামে রাতের অন্ধকারে দেহে, আর
সারারাত ভোজ উৎসব
করে ফ্যাঁকাসে দেহ ফেলে চলে যায়। ভোরের আলো বাতাস আসে না বদ্ধ বয়োমের প্রজাপতির কাছে। ধীরে ধীরে
নিস্তেজ হচ্ছে প্রাণ। হ্যালুসিনেশনের
কারণে হয়ত- মাঝে মাঝে মনে হয়, তোমার গাল আমার গালে লেগে আছে! একটু
পরে টের পাই চোখের জলের স্পর্শ। ভালোবাসার চেয়ে শক্তিশালী হতে পারিনি কখনও। বার
বার হেরে যাই। অনেক
সময় মনে হয়, কাকে বেশি ভালোবাসি- মৃত্যু, না তোমাকে? উত্তর আসে
আত্মার কোনো মৃত্যু নেই। কারো
কারো জীবনের আলো নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা থাকে, সে ঈশ্বরী। তাহাজ্জুদের
প্রার্থনায় জায়নামাজ ভিজে যায় চোখের জলে। জানি না, আবার
কোনোদিন তোমার মুখ দেখবো কিনা। কবরের নিকষ অন্ধকারে কেবল শ্বাস জানায় ভালোবাসা। মৃত্যু
যন্ত্রণায়ও তোমাকে যেন বলতে পারি, ভালো আছি- এই প্রার্থনা। বিছানায় শুয়ে শরীর দুমড়ে-মুচড়ে এক সময়
ক্লান্ত শরীর লাশটা বারান্দায় গিয়ে রাতের আকাশ দেখে। কোনোদিন ঘুম হয়, কোনোদিন
হয় না। সকালের
আলো টেনে নিয়ে যায় জনস্রোতে। রিকশা বা লোকাল বাসে চলতে চলতে মন্ময় মগজ ডুব দেয়, ইমেজের
সিন্ধুকে। দিনরাত
জখমের যে রক্ত ঝরে অন্ধকারে, স্নান করার জন্য বাথটাব ভরে ওঠে! এই
শহর ঘুমিয়ে পড়লে আমি ডুবে থাকি রক্তের ভেতর।
তোমার পাহাড়ের
সবুজের বর্গ দিয়ে আটকে দিও বুকের রক্তের এই বৃত্ত। আইলের পর আইল তুলে আদিগন্ত ধানক্ষেত হবে
আমাদের সবুজ সংসার। প্রতিটি
ক্ষুধার্ত শিশুর চোখে দেখে নেবো, তোমার কথা বলা চোখ। সারারাত বুকে লাঙল দিয়ে যে উর্বর জমি,
তাতে বুনে দিয়েছি আগামী প্রজন্মের জন্য প্রেমের বীজ। জানি আমি, বাংলার প্রতিটি নদী তোমার
ঠোঁট। স্মৃতির
পলিতে উর্বর জমিন থেকে তুলে নেবো জীবনের গোলাভরা ধান। আমার হারাবার কি আছে বলো?
- তোমার কবি
...................................
ছোট বউ
হিমাংশু দেব
বর্মণ
বিয়ের
ব্যাপারে কোনো মতামত ছিল না বিথির। তবে একটি কথা সে প্রায়ই বলতো- দাদা, আমি
ছোট বউ হবো।
আমি ভাবতাম,
কোনো পরিবারের ছোট ছেলে ওর পছন্দ। একদিন প্রশ্ন করলে সে আমার ভুল ভেঙে দিলো। বলল-
-দাদা! আমি
তোদের ছোট বোন। ছোটরা আহ্লাদে মানুষ! বড়র দায়িত্ববোধটা আমার মধ্যে নেই। কিন্তু বড়
বউ হলে আমার ঘাড়ে আসবে বড় দায়িত্ব। ওটা সামলানো আমার পক্ষে সম্ভব না! তাই, আমি
বাপের ঘরের ছোট বোন। শ্বশুরঘরেও ছোট থাকতে চাই!
ওর কথা শুনে
আনন্দে হাসলাম। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে ও সবার ছোট। কথাটায় যুক্তি খুঁজে পেলাম। একদিন
সত্যি সত্যি ওকে ছোট বউ করেই স্বামীর ঘরে পাঠালাম। ছয় ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ওর
বর। বড় সংসারের ছোট বউ বিথি। বোনের ইচ্ছে পূরণ করতে পেরে আমি খুব সুখী। আগের মতোই
হাসি-আনন্দে কাটছিল আমাদের দিনগুলি!
হঠাৎ একটা
চিঠি এনে হাতে ধরিয়ে দিলো ডাকপিয়ন। ওটা বিথির লেখা।
-দাদা! আমার
ইচ্ছেমতো বিয়ে দিয়ে তুই আজ খুব সুখী। আমিও হয়েছিলাম! তুই
কথা রেখেছিস বলে। কিন্তু, আজ প্রতিটি মুহূর্ত আমাকে টানছে বিষণ্নতার দগ্ধ প্রান্তরে।
ওরা আমাকে বধ্যভূমিতে রেখেছে!
-আমার সব আশার
পাঁপড়িগুলো একে একে ঝরে গেছে। শুধু প্রাণটা নিয়ে কোনোরকমে আছি। এদের বড় সংসারে যা
আছে, ঠিক
সোনার পাহাড় গড়ে তোলার মতো। কিন্তু সে চেষ্টা কেউ করে না। সবাই যে যার স্বার্থ
নিয়ে ব্যস্ত। যার হাতে যা যায়, তার হিসাব খাতাকলমে মিলে যায় নির্ভুল
সমাধানে। আর পুঁজি চলে যায় ব্যক্তিগত তহবিলে। সংসারের সবাই আলাদা তহবিলদার। আমি
এসব মেনে নিতে পারছি না! বলাও নিষেধ। আমি ছোট। এসব ধরাধরি করলে বেয়াদবি করা হয়। আর
ছোটর কথা শোনেই-বা কে! তাছাড়া ছোট হয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে
উল্টে পিঠ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেখানে তাল-তেঁতুলের চাষ প্রসঙ্গটা অনিবার্য হয়ে পড়ে।
এটাই তো সমাজের নিয়ম!
-ওরা আমার
ভাসুর। আমার কাছে এসে বড় বউদের পিঠ বাঁচে। কিন্তু ও যে তাদের দেবর। আমি ওদের কোলে
ঠাঁই নিলেও,
আমার পিঠ বাঁচে না। এরকম ছোট বউ তো হতে চাইনি, দাদা! কালে কালে
পৃথিবীর সব কিছুর পরিবর্তন হলো। কিন্তু সমাজ-সংসারের এই দুর্নীতির কি কোনো
পরিবর্তন কোনোদিন হবে না? বিথিরা কি ফিরে পাবে না সেই মুক্তঝরা
হাসির দিনগুলি?
-দাদা! আমার
এই অশান্তির জন্য তুই যেন নিজেকে দায়ী মনে করিস না! আসলে বিথিদের এই পরিণতির জন্য
একমাত্র দায়ী চলমান সমাজ ব্যবস্থা। পারলে এই সমাজের বিকল্প হিসেবে কিছু করার
চেষ্টা করিস। আমার সংসারের কথা সব বড় বৌদিদের জানিয়ে দিস! আর তোরা তোদের সমষ্টিগত
উন্নয়নে সচেষ্ট থাকিস! তাহলে সংসারে শান্তি থাকবে। সমাজের অনিয়ম কিছুটা ভাঙতে শুরু
করবে। নতুন নিয়ম এসে ভর করবে আপন আগ্রহে। অনিয়মের শূন্য ঘরটা জাগতিক নিয়মেই পূরণ
করবে, একটা সুনির্দিষ্ট সুষ্ঠু নিয়ম। তখন তোর সংসারের একমুঠো সুখ বাষ্প ছড়াবে সারা
সমাজে। ঘুণে খাওয়া সমাজের যেন আশু মুক্তি হয়! বিথিরা যেন ফিরে পায়, তাদের
প্রত্যাশিত বাস্তবতার প্রত্যয়।
................................
সৃষ্টি ও
নির্মাণ
মঈন চৌধুরী
সৃষ্টি
প্রচলিত প্রথাবদ্ধ প্রতীকী শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। একজন মানুষ, যে
প্রচলিত প্রথাবদ্ধ জাগতিক নিয়ম ও শৃঙ্খলার বন্দিত্ব স্বীকার করে বেঁচে আছে, সে
নিঃসন্দেহে স্রষ্টা নয়। সে
একটি নিরামিষ পতিত সত্তা। কোন
পতিত-সত্তার বিদ্রোহ হবে অমানবিক পারভারশন। সে ভেনাস কিংবা ম্যাডোনার ছবি দেখে মনে
তুলে নেবে ধর্ষণের মোহ। তার
ভাষা হবে, বাচাল, নষ্ট সময়ের ধ্বনি। রামধনুতে সে কেবল দেখতে পাবে, অস্ত্রের সংঘাত। স্রষ্টা হওয়া
খুব একটা সহজ কিছু নয়।
সৃষ্টির রূপ ও
স্বরূপ প্রকাশ করতে গেলে ভাষাকেন্দ্রিক প্রতীকী-শৃঙ্খলায় আবদ্ধ মানুষের মনের
জানালার কপাট খুলে দেখতে হবে প্রথমেই। এই সেই মানুষ, যে জাক লাকা কথিত 'আয়না
পর্ব'-র
সময় থেকেই বন্দি হয়েছে কতক সামাজিক, জৈবিক আর
রাষ্ট্রীয় নিয়মের শৃঙ্খলে। কিন্তু সে মুক্তি চায়, অনিশ্চয়তাবদ্ধ
ঠিকানাহীন বৈশ্বিক বস্তুবলয়ে অবস্থান করে সে চায় তার নিজস্ব অহংসত্তাকে নির্দিষ্ট
সত্যমাত্রায় প্রকাশ করতে। যে
নতুন ভাষায়,
নতুন চিন্তায়, নতুন রঙে, নতুন ফর্মে
সত্যকে তুলে ধরতে পারে, সেই হয় স্রষ্টা।
কিন্তু মুশকিল
হলো, জাগতিক
বাচাল ভাষায়,
ক্লিশে রঙে, বহুল ব্যবহৃত ফর্মে কিংবা সাধারণ গণিতে
অহং-সত্যকে তুলে ধরা সম্ভব নয়। কেবলমাত্র আপেক্ষিক মিথ্যা দিয়েই চরম সত্যকে উপস্থাপন করা
সম্ভব। এখানে
বলা আবশ্যক যে, আপেক্ষিক মিথ্যা কিন্তু মিথ্যা নয়। জাগতিক বাচাল কিংবা অপরিচিত সত্যকে চরম
সত্যিরূপে প্রকাশ করার জন্যই আপেক্ষিক মিথ্যা ব্যবহার করা হয়। আপেক্ষিক মিথ্যা কিছু উদাহরণ দিয়ে
বোঝানো যাক। জীবনানন্দ
দাশের 'চুল
তার কবেকার অন্ধকার', 'পাখির নীড়ের মত চোখ', বিষ্ণু
দের 'কাল
রজনীতে ঝড় হয়ে গেছে রজনীগন্ধা বনে', আল মাহমুদের 'গাঙের
ঢেউয়ের মত বল কন্যা কবুল কবুল', শামসুর রাহমানের 'দ্বিধাহীন
আমি উড়ে গেলাম সূর্যের ঠোটে রক্ষাকবচহীন প্রার্থনার মতো', নিউটনের
MV=MV, আইনস্টাইনের
E=Mc^2,
দালির আঁকাবাঁকা ঘড়ি, পিকাসোর
ত্রিমাত্রিক নারী,
এইসব হলো আপেক্ষিক মিথ্যার উদাহরণ। একজন বোদ্ধা সত্তা যখন এই আপেক্ষিক
মিথ্যা বোঝে,
তখন তা নান্দনিক রস নিয়ে চরম সত্যি হয়ে উপস্থিত হয়।
সৃষ্টির সাথে
নির্মাণের সম্পর্ক সহজাত। সৃষ্টি
করতে হলে ব্যাকরণ জানতে হয়। এই ব্যাকরণই নির্মাণ, আর
নির্মাণপর্বের কোনো এক ধাপে সৃষ্টির অবস্থান। ঐতিহ্য আর ব্যাকরণ জানা না থাকলেও
নির্মাণের বৃথা চেষ্টা করা যায়। কিন্তু ব্যাকরণ জানা না থাকলে কিছুতেই
নির্মাণকে সৃষ্টির পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় না। একজন স্রষ্টা নির্মাণ কৌশল অবলম্বন করে
সৃষ্টি করতে পারেন। আবার তার পক্ষে নতুন নির্মাণ কৌশল
আবিষ্কার করাও কঠিন কিছু নয়।
আমাদের দেশে
নির্মাণের কৌশল না জেনেই অনেকে স্রষ্টা হতে চান। আর তাদের তৈরি
'বিষয়
বা বস্তু'
সৃষ্টি হিসেবে হাততালিও পায় প্রচুর। তাদের পুরস্কৃত করার জন্য 'বটতলা' আছে।
তাদের গুণগান করার জন্য আছে 'স্রষ্টা সমিতি'। আর
প্রচারের জন্য আছে 'অন্ধকার কালো'। সৃষ্টির সঠিক
মূল্যায়নের জন্য আমাদের প্রয়োজন সৃষ্টির তত্ত্ব জানা ভালো সমালোচকের।
...............................................................
কবি হেলাল হাফিজের প্রতি
আবু বাসার আখন্দ
ঈদ সংখ্যার জনকণ্ঠে
হেলাল হাফিজের একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হলো।
প্রশ্ন ছিল
অনেক।
জানালেন, সামনের
বইমেলায় তার একটি কবিতার বই বের হচ্ছে।
বেশি সময় নেই। একটি কবিতাও
লেখা হয়নি। তবে
ওই বইটির জন্যে একটি কবিতার দুটি লাইন লিখেছেন। কিন্তু কলমে নয়-
'তোমার জন্যে
নখের নীচে রেখেছিলাম প্রেম
কাটতে কাটতে
সব খোয়ালাম...!'
অনেক ইচ্ছে
সেই এতদিন ধরেই
পুরো কবিতাটি পড়ি।
কিন্তু; খুঁজেছি অনেক। তন্ন তন্ন করে।
কোথাও মেলেনি
কবিতাটি।
ভেবে রেখেছি,
একদিন ঠিক চলে
যাব প্রেসক্লাব,
পল্টন
যেখানেই পেয়ে
যাই, স্ট্রেইট
কাট বলবো,
স্বপ্নবাজ!
চাই আমার
কবিতাখানি
আজ এবং এক্ষুণি।
...........................
কবিতা
ইঁদুর দৌড়
-- বারুনি বিশ্বাস
হলুদ বিকেল এলে
বাদামী মেয়েটির কথা মনে পড়ে
ইচ্ছা করে কাছে ডেকে বলি ---
বসো এইখানে
স্নেহের হাতে মুছে দাও শরীর থেকে
এই অশ্লীল নাগরিক ঘ্রাণ
আমার পাপের দাগ, সদম্ভ আস্ফালন ।
সূর্যোদয় থেকে দৌড় প্রতিযোগিতার
সেই যে শুরু
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা সমাগত---দৌড় আর থামে না
মুখোশের পর মুখোশ পাল্টে
আজও সেই অবিরাম ইঁদুর দৌড়
নিজের মুখ আর নিজেই দেখি না
মানুষের শরীর ঢাকে মানুষের মুখ।
রূপশীলা, তোমাকে ছুঁতেও আজকাল
আমাকে দৌড় প্রতিযোগিতায় নাম লেখাতে হয়।
ইচ্ছা করে কাছে ডেকে বলি ---
আমার স্পর্শের ভেতরে এসো, বসি মুখোমুখি
থেমে যাক ইঁদুর দৌড়
দুচোখের আয়নায় দুজন দেখি দুজনের মুখ ।
..........................
নির্লিপ্ততা
-কান্তা রেজা
জ্যামে আটকা
পড়লে আমিও ঘুমাই,
ঘুমের ভেতর
পুকুর- অসহায় সাঁতারে কার মুখ ভেসে ওঠে?
কে ডাকে?
যে ডাকে
ডাকুক!
বিচূর্ণ
ঘেন্নার ভেতর আমি এখন "এ শহরের মৌলিক পাখির নাম কাক" - এ নিয়ে ভাববো।
এ শহরের মৌলিক
প্রেমিকার নাম বেশ্যা- যে শহরের আয়ু চিরে অন্ধকার বিইয়েছে।
আচ্ছা, ক্ষতের
সংকল্পে ঋতুরক্ত মাখা জরায়ু কি ফণার মতো?
জ্যামে আটকা
পড়লে আমিও জেগে থাকি,
উঁকি দিই জন্মের
ভেতর- ঘ্রাণে-গন্ধে শ্বাসচিহ্ন বাড়ে,
কে বাঁচে?
যে বাঁচে
বাঁচুক।
ঝুঁকে পড়ে
ধ্যানের ভেতর আমি বরং দৃশ্য ধরে ফেলি,
ভাবি...
এ শহরে তাসের
সমর্পণে থাকা জুয়াড়িই একমাত্র কবি এ শহরের নুনমাখা রোদে কালো পকেটমার ছেলেটিই
নায়ক!
আচ্ছা, ক্ষমাহীন
পৃথিবীকে জেনে নির্জন শব্দের কাছে কি সাপ শুয়ে থাকে?
....................
'সভ্যতা'
-অসীম ঘোষ
আমি সভ্যতা, আধুনিক
সভ্যতা
আমি চাঁদে
গিয়েছি,
মঙ্গলেও,
এরপর মহাকাশ
জয়ের টার্গেট,
থামার প্রশ্নই
ওঠে না
এগিয়ে যাব
অবিরাম।।
কিন্তু যাবার
আগে তোমাকে উলঙ্গ করে আমার সভ্যতা ও ধর্মের শক্তি দিয়ে
তোমার ঋণ শোধ
করে যাবো,
প্রজন্মের
কাছে আমার অঙ্গীকার রইলো।
তুমি সাঁওতাল
আমার আদিভূমি,
তুমি মালাউন
আমার পূর্বপুরুষ,
আমার ধর্ম, আমার
বেহেশতের জন্য
আমি তোমাকে
বিসর্জন দিলাম,
কারণ...
আমি বর্তমান, আমি
সভ্যতা,
অতীতকে মনে
রাখা আমার পাপ।।
...............
দাহ
-দুখাই রাজ
দাহের পাশে যে পুরোহিত দাঁড়িয়ে
মন্ত্র পড়ছিলেন
তিনি জানেন- হাত দুটোর রঙ এত আলাদা
কেন?
মধ্যবয়সে রেবুতি একবার গাছ থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙেছিল
লগ্নসার নিয়ে গিয়ে ঠিক হয়েছিল সে
হাত
তার হাতে আর কেউ রাখেনি হাত
তার সাথে খেলেনি কেউ
চৌকাঠের ভেতরে যখন ঢুকে পড়েছিল এক ছুক ছুক বেড়াল
রেবুতি ভেবেছিল- এই বুঝি মানুষ তারে
ভালোবাসা কয়
বলেছিল- 'আমি জানি কাঁটা খাওয়ায় সুখ তোমার
কাঁটা খেয়েও যদি হাতটা ধরো, চলে যাবো তোমার সাথে'
বেড়াল তাকে নিয়ে গ্যাছে শেষে, হাত ধরে হাতে
পুরোহিত মন্ত্র পড়েন পাশে, হাত রেখে হাতে
...................
কী করছো তুমি, এখন কি রাত, কটা বাজে ?
একা একা অন্তরে আছো জানি,
অথচ দেখ এই আশ্চর্য ঘড়ির সময়ে অনিবার্য রেখায়
আঁকা হচ্ছে দুঃখ আর কষ্টের কারুকাজ।
শোনো, আশ্চর্য, তুমি কি জানো না কিছুই !
এখন তো তোমার রাত্রিকাল,
কালো চকমকে আলো হঠাৎ করে
আলোর অন্ধকারে ভেসে গেলে কি যে হয়
তা কি চিন্তা করতে পারো ?
যদি পারো তবে দুঃখ আর কষ্টের অর্থ পাবে
পেয়ে যাবে সমুদ্রস্থিত সমস্ত ব্যর্থতার ইতিহাস।
যাচ্ছো যাও, যতদূর পথ খোলা পাও
-রূপকথা রুবি
বুঝতে পারছি,
একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছো!
এমন করেই বর্ণ আমাকে একদম
একা করে যায়...
তুমিও যাচ্ছো? যাও! যতদূর পথ খোলা পাও,
ততদূর এগিয়ে যাও...
পাত্তা দিও না মিছে মায়ার পিছুটান
ফিরে তাকিও না পথের বাঁকে
ফেলে যাওয়া পথিকের দিকে!
ছুঁতে চেয়ো না আর স্মৃতির ভারবাহী
ডাকবাক্সকে!
আমার যত
গল্প-কবিতা
আলগোছে রেখে যাবো ঝরাপাতার বুকে
কখনো জলে চোখ ভিজে এলে,
ঘাসের বুকে থাকবে না হয় কিছুটা জমে।
শুধু শিশির ভেজা ঘাসের ওপর চলতে গিয়ে
পা ভিজে গেলে জানতে চেয়ো না,
কার চোখের জলে ভিজে গেল তোমার সময়টা।
......................
আমার মা কবি ছিলেন-১
- ভাস্কর চৌধুরী
অবশেষে আঁধার এসে বসন সরালো
ন্যাড়া মাঠের মতো ফকফকে একটি সকাল
এখন পদ্মার তীরে সুমধুর হাওয়া
চরটা কেবল জেগেছে, সেখানে ভেজা বালিতে অজস্র পা চলছে
অথচ পদচিহ্ন মুছে যাচ্ছে দ্রুত
একজন কবি হাতে ধবধবে কাগজ নিয়ে
পড়ে গেল বিশাল কবিতা
সুর তাল নয়, প্রকৃতি নিবিড়, মানুষের বুকে জল নেই
অথচ মনে নদী কুলুকুলু
তিনি কোকিলের ডাকের কথা বললেন
কবি জলের কথা বললেন
কবি মোচড় দিয়ে গেঁয়ো কবিদের মতো
একপাক ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন
ঐ যে মাঠ দেখা যায়
ঐ যে ফাঁক দেখা যায়
ঐ যে বুকে তিলের মতো শস্য দেখা যায়।
আমার মা ফকফকে জ্যোস্নার কবি ছিলেন-
তিনি বলেছিলেন, ‘এই আমাদের সোহাগপুর, বাবা
এইখানে থেকে যাস; এই যে দেখছিস
আমাদের ফাঁকা মাঠ
এখানে গরুগুলো চরালেও দুটো ভাত পাবি
আর বর্ষায় কলার ভেলায় একটু ছিপখানা নিস
মাছেভাতে ভালো খাস
আঘুন এলে একদিকে ধানকাটা
আরেক দিকে শস্যের ইশারা
সাড়া দিস, বাবা’।
আমার মা কবি ছিলেন।
তিনি ফকফকে জ্যোস্নার কথা বলেছিলেন
তিনি চাঁদের চতুর্দিকে
পাঁচ কোটি নক্ষত্রের কথাটা বলে গেছেন
বলেছিলেন মা, ‘এই যে কাগজ নে
লিখ তো এখানে স্বরে-আ’।
আমি আমের কথা লিখেছিলাম
আমি আশার কথা লিখেছিলাম
আমি বন্ধু আজিমের নাম লিখেছিলাম
আমি আবিষ্কারের কথা লিখেছিলাম।
আজন্মা বিলে কি অঢেল জল দেখিনি আমি?
মাঘ ফাগুনের পর কি বোরো ধান
একটাও কেয়ারীতে অজস্র দেখিনি?
আমি কি মাঠে গরুর পালের চরাই দেখিনি?
আমার মা ফসলের কবি ছিলেন
বন্যার মাঝে পলিমাটির আশাবাদী মানুষ ছিলেন
তিনি ফাঁকা আকাশে ফকফকে সাদা পাখিদের কথা বলেছিলেন
তিনি বালিহাঁসের উড়ালের কথা বলেছিলেন
তিনি সোহাগপুরে থেকে যাবার কথা বলেছিলেন।
আমার মা, ফসলের মাঠের কবি ছিলেন
আমার মা বারবার আশাহীনতার মাঝে
আশার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন।
যখন ছেলেরা দলবেঁধে জঙ্গলে বন্দুক কাঁধে
সাম্যবাদের খোঁজে ঘুরছিল
আমার মা তাদের ঘরে এসে কাজের কথা বলেছিলেন
আমার মা কাগজে শব্দের কথাটা বলেছিলেন।
তিনি শব্দমাতা, শব্দের কবি ছিলেন।
অলখ যাপনে তিনি লক্ষের কথা বলেছিলেন
তিনি কালো কাপড়ে সাদা ফুলের বয়নের কথা বলেছিলেন
তিনি সবুজ হলুদ ও লাল সাদা মিশ্রণের কথা বলেছিলেন।
আমার মা ধবধবে কাফনের নিচে
মানুষের অস্তিত্বের কথা বলেছিলেন।
আমার মা কবি ছিলেন।
তিনি সুহাগপুরের মাঠে, গাইচারীর কথা বলেছিলেন
তিনি আল, ফাল, কর্ষণ ও কোলাহলের কথা বলেছিলেন
তিনি ফাঁকে ফাঁকে পুকুরের কথা বলেছিলেন
পদ্মফুল ও পাতার কথা বলেছিলেন।
আমার মা কবি ছিলেন।
তিনি শত আঁধারে আলোর কথা বলেছিলেন
তিনি চাঁদহীন রাতে তারাদের কথা বলেছিলেন
অতল আঁধারে বাঁশবন, গোরস্থান,
শ্মশানে জোনাকির কথা বলেছিলেন।
আমার মা, কাজের কথা বলেছিলেন
সুজনীতে তিরিশ হাজার ফোঁড়ে শিল্পের কথা বলেছিলেন।
আমার মা কবি ছিলেন।
তিনি শত শত নিরাশার মাঝে সান্ত্বনার কথা বলেছিলেন।
যেখানে আকাশ নীল
এফ জে মুমু
যেখানে আকাশ নীল
আমি আসবো গোধূলি হয়ে।
আকাশের রূপ দেখে ভাবাবে অযাচিত কিছু
স্মৃতি কথা ।
স্নিগ্ধ জলের মৃদু-মৃদু হাওয়া এসে
ছুঁয়ে যাবে এলো চুল।
তখন একটু শিহরিত হবে মনও।
আনন্দের বিপুল তরঙ্গে মন বলবে-
বার বার
আমি কেন অপরাজিতা হবো......!
আমি যখন
সাহসী হই
-মাহফুজুর রহমান মুকুল
আমার কবিতা আমাকে ভীষণ সাহসী করে,
আমার সুরের ভাঁজে ভাঁজে ওঁৎ পেতে আছে
আমার সাহসী লস্করেরা শব্দবন্ধনে।
বহুজাতিক স্বপ্নে যারা মানবতা হারিয়েছে,
যারা ভুলে গেছে কাঁদামাটির মেঠোগল্প,
‘আমার বাবা কৃষক’ বলতে যারা কুণ্ঠিত হয়-
আমার গানগুলি তাদেরকে ছাপিয়ে
ধন ধান্য পুষ্পে ভরে ওঠে আমার উঠোন।
আমার আঙুলের ডগায় জেগে ওঠা স্বরগুলি
কণ্ঠে ধ্বনিত হয় সাহসী যৌবনের উচ্ছ্বাসে।
আমি সাহসী হয়ে উঠি স্বপ্নদ্রষ্টা মুক্তিযোদ্ধার মতো্।
যখন কবিতা লিখি-
কবিতার অক্ষরবৃত্তে বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকে
আমার হতাশাধ্বংসী সাহসী বালকেরা।
আমি সাহসী হই পরম নিশ্চিন্তে-
মায়ের বুকে শিশুরা যেমন থাকে।
হে আমার বহুজাতিক মমতাহীন অনুচ্ছেদ
আমাকে টলানোর ধৃষ্টতা কি তোমার আছে?
অবকাশ
-শরীফ সুজন
টুপটাপ কিছু চুপ কথার জট
আর উপচেপড়া নীরবতায়
ডুবেছিলাম কোথাকার কোন কোলাহলে
নিঃশ্বাস ছুটে বেড়ানোর ঝাঁপসা শব্দে!
আমাদের মুখোমুখি পাশাপশি
এমন অনেক নামহীন থমথমে
ঝাঁপসা প্রহর কেটেছে পর্দার গল্পে।
তোমার আঁকা দেয়ালের আকাশে
আমি জড়সড় শীতঘুড়ি,
আমি কুয়াশার বেলকনিতে রোদফুল
তোমার ভোরের আড়মোড় ভাঙা ঘুমে।
আমি তোমার হাত লুকানো সোয়েটারের
হাতের ওম
আর সেইসব অদৃশ্য ধোঁয়া ধোঁয়া স্বপ্নে
তোমার বিছানো কোলে
আমার থাকে শিশু শিশু আবদার!
তুমি কি কাছে টানো দূরে ঠেলবে বলে?
..................
নতুনখাতা...
জান্নাত রুহি
এতদিন যুক্তির সাথে থেকেছি
সেখানে পাইনি জীবনের মানে,
শুধুই কণ্টক সজ্জিত বিছানা
ছুটে গিয়েছি অসীমের পানে।
তারপর ডুব দিয়েছি রসাতলে
তল খুঁজে পাইনি,
ডুবেছি অতলে
রসাতলে।
আজকাল
ধূসরিমা অনায়াসে,
খয়েরি করেছে ধারণ
বিষাদময় যন্ত্রণার অবসান দিতে।
এতদিন পর আজ আবার
নতুনখাতা নতুনভাবে খুলে,
জীবনের প্রচ্ছদ আঁকলাম পেন্সিলে
না পাওয়ার গ্লানি ভুলে।
.....................
সুমন
মজুমদারের কবিতা
আমি রাত্রির পেয়ালায় চুমুক দিয়ে
বলি--চিয়ার্স
তবু ভোরের দিকে ঘোর ভেঙে যায়
সকাল সকাল ঠোঁটের পাশে এগিয়ে আনি আগুন
তবু পরক্ষণেই ঘোর ভেঙে যায়
দুপুর বেলা এক ছক্কার রক্ষা কবচ
বিকেল বেলা হাঁটতে থাকি নগর বারান্দায়
তবু ঘোর কেটে যায়, ঘোর
কেটে যায়
আমি সন্ধ্যা বেলা পুড়িয়ে চলি তপ্ত
দুহাত
রাত্রিবেলা দরজা খোলে রিপুর কাঁপন
মাথার বালিশ পাশ ফিরে শোয় অন্য কোথায়
আর আমার কেবল ঘোর কেটে যায়, ভোর
কেটে যায়...
......................
তোমার জন্য
তোমার জন্য বুকের ভেতর দহন অনির্বাণ
তোমার জন্য ভালোবাসার কবিতা নির্মাণ।
তোমার জন্য হৃদয়ে বিষাদের স্বেদ
তোমার জন্যই দুরে যাওয়া, দুরত্ব
বিচ্ছেদ।
তোমার জন্য রবী ঠাকুর বুকে সেঁটে রাখি
তোমার জন্য ডেকে যায় স্মৃতির সেই পাখি।
................................
আতঙ্ক: পেডোফিল ও নরপশুর
-তাহমিনা শাম্মী
কবিতা নয় শব্দের গায়ে রক্তের দাগ
কলমের কালিতে বীভৎস চিৎকার
আমাদের ভিতরের পূজার, আমাদের স্বপ্নের পূজার
আমাদের বর্তমান পূজার, আমাদের ভবিষ্যত পূজার চিৎকার
প্রতিনিয়ত থরথর কাঁপে ডায়রির লেখা-অলেখা প্রতিটা পাতা
যে মেয়ের ক্রিকেট কিংবা পুতুল নিয়ে খেলা করার কথা
তার যোনিতে খেলা করে নরপশুর শিশ্ন
যে মেয়ের মায়ের গলা জড়িয়ে ঘুমানোর কথা
সে ঘুমায় হাসপাতালের মর্গে
যে মেয়ের বাবার গলা জড়িয়ে গল্প শোনার কথা
সে আইসিইউতে লড়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা
যে মেয়ের সংসারের হাল ধরার কথা
সে মেয়ে এখন কবরের গহনদেশে।
যে মেয়ের দেশের জন্য জীবনবাজি রাখার কথা
সে, সেই দেশে সুবিচারের জন্য পোস্টমর্টেম ঘরে ছিন্নভিন্ন।
বড় দুর্দিন, বাবা-মা নির্ঘুম তার নারী শিশুটির জন্য, নারী মেয়েটির জন্য
স্বদেশের বুকে আজ বীভৎস আলোআঁধারীর রূপ
শিশু নারীর চিৎকারে ভেঙে যায় গুহাবাসী বাদরের ঘুম
নিকষ আঁধার হয় আরো বেশি কালো
পেডোফিলের হাসিমাখা দাঁত দেখে লজ্জায় রাঙা হয় হায়েনা
কালকেউটে ছেড়ে দেয় হাজার বছরের বিষ
নরপশুর উত্থিত শিশ্নের ভীষণ ঝলকানিতে
ভাদ্রের কুকুর ভুলে যায় প্রজনন
জেগে ওঠে হাজার বছরের পাঁথরচাপা জল।
হলুদ-খেত আরও বেশি উর্বর হয় পূজার রক্তে
খাদিজার রক্তে ভিজে যায় ক্যাম্পাস
তনুর রক্তে ভেসে শুদ্ধ হয় ক্যান্টনমেন্ট
পাঁচ বছরের নারীর রক্তে আরও মজবুত হয় মাল্টিস্টোরেজ বিল্ডিং
সমাজের বুকে চিকিৎসাবিহীন, বিচারবিহীন বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়
একেকটা পেডোফিল, একেকটা নরপশু!
..................................
পাহাড়ি ঢলের
চাঁদ একমুঠো পেঁজা তুলো
আশিস বিশ্বাস
বলেছিলাম, এ
পাহাড়ি ঢলের চাঁদে
ওই চাঁদমুখ
যেন ঢাকা না পড়ে
ওই চাঁদমুখে
পাহাড়ি ঢলের চাঁদ
এক পেঁজা তুলো
মাত্র...
ভুলে থাকার
একপেঁজা তুলো
হাতে দিয়ে
চাঁদমুখ হারিয়ে যায়
মেঘের
আড়ালে...
ফাঁকি দিয়ে
পাহাড়ি চাঁদ
দেখা দেয়
পাহাড়ি ঢালে
পাহাড়ি ঢলে
দেখা দেয়
এক পেঁজা তুলো
চাঁদনী রাতেরই
মতন
দিগন্ত
সীমারেখায়...
চাঁদমুখো রয়ে
যায় আড়ালে তবু
ছায়াছবি তার
আঁকা পড়ে মনে
পাহাড়ি ঢলের
একপেঁজা তুলোচাঁদ
চাঁদমুখো ওই
মুখে আলো ফেলে
মলিন হয়
পাহাড়ি ঢলের চাঁদ
আড়ালে থাকা
চাঁদমুখো চাঁদমুখীর
পায়ের কাছে নতজানু
হয়ে...
.......................
একটা শুদ্ধ
মানুষের দরকার
সবাই কি পারে… শুদ্ধ
মানুষ খুঁজে নিতে?
ভুল মানূষটাকে ভুলে যাওয়া বড়ই কষ্টকর। এর জন্য বারবার মনের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। আসলে যখন কারো ওপর মায়া পড়ে যায়, তখন বিবেকের ওপর মন এত বেশি প্রভাবশালী হয়ে যায়, মন
যা বলে তাকেই অগ্রাধিকার দেই। চোখের সামনে সব ভুলগুলো লুকোচুরি খেলে অথচ মন বলে চিন্তা করিস
না। এসব
তো হয়ই। সব
ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু
সবকিছু আরো খারাপ হতে শুরু করে। frustration
জমতে থাকে নীরবে। একসময় সে ভুল করলে নিজের ওপর রাগ হতে থাকে। জমানো
frustration-গুলো বের হওয়ার জন্য ছটফট করে। সেই মানুষটা হয়ত frustration-এর
ছিটেফোঁটা পায়। কিন্তু পুরোটাই প্রায় নিজকে সহ্য করতে হয় । রাতের পর রাত বালিশ ভিজতে থাকে নিয়মমতো। তখন মানুষ আর
স্বাভাবিক চিন্তা করতে পারে না। উল্টোপাল্টা চিন্তা আসে মনে। জীবনটা খুব অসহ্য লাগতে থাকে। এভাবে একটা
সময় বিবেক মনের কাছে হেরে যায় এবং জীবনের ইতি ঘটে।
ভুল মানুষটাকে সুযোগ কি দেয়া যাবেই না??? যদি এমন হয় যে, ভুল
মানুষটা বারবার ভুল করে, আর আমি বার বার মায়াকে জিতিয়ে দিয়ে
তাকে আবার সুযোগ দেই। তাহলে
একদিন কি সে পরিবরর্তন হবে না??? হতেও তো পারে। তাকে সুযোগ না দিয়ে কি শুদ্ধ মানুষ
খুঁজবো??
সুযোগ মানুষকে হয়ত বা কখনো শুদ্ধ করে দিতেও তো পারে !!
যেমন
"ব্লক লিস্টের মানুষগুলো সারাজীবন ব্লকই থেকে যায়"। তাদের মনে
পড়ার কোনো অবকাশ নেই। পর্দার
পেছনের মানুষ গুলোর ওপর আর কখনই আলো পড়েনা। কথাগুলো কখনই জানা হয় না। ভুলগুলোর
কোনো অবসান হয় না। শুধু
ঝাঁপসা প্রলেপ পড়তে থাকে সময়ের। বুকের ভেতরের বাতাসগুলো জমে যায়, কঠিন
হয়ে। অনুরোধ
একটাই,
মানুষগুলোকে প্রায়শ্চিত্তের সুযোগ দিন। নিজের কারাগারে বন্দি আসামির জীবনটা
অনেক কঠিন।
আমরা মানুষ
নির্বাচনে ভুল করতে পারি কিন্তু নিজের অনুভূতিগুলোতও আর ভুল না! এত তুচ্ছ না!
হাঁ জীবন, একটাই এতে রিপ্লে বাটন নেই !!
.............................
রঙ্গব্যঙ্গ
এঞ্জেল
মোনালিসা
রহিমা ঠিক
করলো, মরবে। কিন্তু কীভাবে মরবে, তা ঠিক ভেবে
পেলোনা!
প্রথমে সে
একটা ব্লেড হাতে নিলো। এরপর
কল্পনা করার চেষ্টা করলো সে। দেখলো, শিরা কেটে ফিনকি দিয়ে ব্লিডিং হচ্ছে। কিছুক্ষণ
ছটফটানি! পরে সব শেষ! দৃশ্যটা ভাবতেই মুখটা যন্ত্রণায় কুচকে গেল তার।
না, এভাবে
মরবে না সে! এরপর ফ্যানের দিকে তাকালো রহিমা। দড়ি দিয়ে পরখ করে দেখলোও একবার। তারপর ভাবলো-
ফাঁস খাবে! এরপর মনে হলো-কিন্তু মাথা ঘুরবে যে!
তাহলে! তাহলে
বিষ! বিষ খাওয়ার রোগী দেখেছে রহিমা। কী যে যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু! উহ! সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই
বিরিয়ানির দোকান চোখে পড়লো তার।
‘আগে খাই। পরে মরণের কথা
ভাবা যাবে'
বিড় বিড় করলো রহিমা!
পেট ভরে
বিরিয়ানি খেয়ে তারপর রাস্তার ঠিক মাঝখানে দাঁড়ালো সে। এবার নিশ্চিত মরবে রহিমা। কানের পর্দা
বিদীর্ণ করে গাড়ি আসছে! এবার চোখ বন্ধ করলো সে। কারোর মুখই সে মনে করতে পারছে না! সব
যেন কেমন ধোঁয়াশা!
হঠাৎ মনের
পড়লো রহিমার-আরে! মরারই যদি এত শখ, তাইলে
বিরিয়ানি খাইলাম ক্যান...!!
................................................
আদিত্য সেন
নচিকেতার গান (অনুলিখন-সুমন
কায়সার)
আদিত্য সেন এক রাজনীতিবিদ
কলোনির ঘরে যার বাস
আদিত্য সেন এক সৎমানুষ
আধপেটা খেয়ে বারোমাস
আদিত্য সেন পিঠ সোজা রাখেন
পার্টির হোল-টাইমার
আধপেটা খেয়ে থাকবেন তবু
মুদির দোকানে নেই ধার
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
সূর্যের মতো যার নাম
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
আজ প্রয়োজন বড় আপনার।।
আদিত্য সেন ভাঙে প্রোমোটার রাজ
আদিত্য পুকুর বাঁচায়
আদিত্য সেন যেন স্বয়ং লেনিন
বিপদকে আঙুলে নাচায়
আদিত্য সেন বলে স্পষ্টকথা
তত্বের কী-বা প্রয়োজন
মানুষের প্রয়োজনে যিনিই দাঁড়ান
তার অাগে কি তত্ত্বকথন
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
সূর্যের মতো যার নাম
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
আজ প্রয়োজন বড় আপনার।।
আদিত্য সেন লাল স্বপ্ন দ্যাখেন
সকলের সমান অধিকার
আদিত্য মানষের খিদের সমন
যার ঘরেতে ঘোর অনাহার
আদিত্য তার শিশুসন্তানকে
লেনিনের গল্প শোনান
’উই শ্যাল ওভারকাম সাম ডে’
দৃঢ়তার সাথে যিনি গান
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
সূর্যের মতো যার নাম
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
আজ প্রয়োজন বড় আপনার।।
ওই যে দূরে যাকে দেখছো বসে
পাত্র হাতে ভিক্ষার
বহিষ্কৃত তিনি পার্টি থেকে
আদিত্য সেন নাম তার
আনেক অনেক টাকা তছরূপের
অভিযোগ তার মাথায়
তবে কেন অদিত্য ভিক্ষা করেন
পাঁচবছর আমার পাড়ায়
রাজনীতি করতেন তার সাথে যারা
গাড়ি-বাড়ি করে তারা সৎ
রাজনীতিতে নেই সততার ঠাঁই
একথার নেইকো দ্বিমত
তবুও আদিত্য ভুলিনি কিছুই
আমরা প্রতীক্ষায়
এই নপুংসকের রাজনীতি ছেড়ে
কবে আপনার হবে উদয়
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
সূর্যের মতো যার নাম
আদিত্য সেন আদিত্য সেন
আজ প্রয়োজন বড় আপনার।।
.................................................